পাকিস্তানে টানা দুই দিনে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্স দেশটির স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯ জন এবং উত্তরাঞ্চলীয় গিলগিত-বালতিস্তানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার একটি সরকারি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলটসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ৩০৭ জন মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশই আকস্মিক বন্যা ও বাড়িঘর ধসে প্রাণ হারিয়েছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার উদ্ধারকর্মী ৯টি জেলায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন বলে প্রাদেশিক উদ্ধার সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে। কিন্তু এখনো বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়েজি বলেন, ত্রাণ সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভারী যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিবহন করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ জায়গায় সড়ক বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা হেঁটে দুর্গম এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন। জীবিতদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও অনেকেই যেতে চাইছেন না। তাদের স্বজনরা এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক সরকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি পাহাড়ি জেলা বুনের, বাজউর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা ও বাত্তাগ্রামকে দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকা ঘোষণা করেছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এ ছাড়া জনগণকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রতিনিধি সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ বলেন, ‘এ বছরের বর্ষা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে এবং দেরিতে শেষ হবে। আগামী ১৫ দিনে বর্ষার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।’ বুনের জেলার বাসিন্দা আজিজুল্লাহ এএফপিকে বলেন, ‘আমি হঠাৎ পাহাড় ধসে পড়ার মতো শব্দ শুনলাম। বাইরে গিয়ে দেখি পুরো এলাকা কাঁপছে। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর শেষ দিন এসে গেছে। পানি এত জোরে প্রবাহিত হচ্ছিল যে মাটি কেঁপে উঠছিল। তখন মনে হচ্ছিল মৃত্যুই সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’ উল্লেখ্য, চলতি বর্ষায় জুন থেকে পাকিস্তানজুড়ে এখন পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। জুলাই মাসে পাঞ্জাব প্রদেশে গত বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আবদুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন। তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়িঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে। তার বাড়িসহ কারও বাড়ি নিরাপদ ছিল না। সর্বত্র ধ্বংস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেখানে মানুষের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করার মতো কেউ ছিল না। এসব কাজে পাশের গ্রামের মানুষদের সাহায্যে করতে হয়েছে। রয়টার্স ও এএফপি