রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রুপা হত্যার রহস্য উন্মোচন

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ বালির বস্তায় ভরে যমুনার পানিতে ফেলে দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। তারা হলেন- ভিকটিম জনি আক্তার রুপার সাবেক স্বামী ও মৃত সোহরাব প্রামাণিকের ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৩২) ও তার বড় ভাই মো. জহির আলী (৩৯)। মোজাম্মেল হকের বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার হিদাগারী গ্রামে। মো. জহির আলী একই জেলার ইসলামপুর থানার চেঙ্গানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ভিক্টিম জনি আক্তার রূপা (২০) জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। রুপা তার দ্বিতীয় স্বামী গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের উজ্জল মিয়ার সঙ্গেই বসবাস করতেন। গাজীপুর পিবিআই-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ২০১৫ সালে মোজাম্মেল হক ও জনি আক্তার রুপার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পরে পারিবারিক ও আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে মোজাম্মেল মালয়েশিয়ায় চলে যান। দীর্ঘ চার বছর মালয়েশিয়া থাকাকালে মোজাম্মেল ভিকটিমের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় প্রায় ৯ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। ২০২২ সালে দেশে ফিরে এসে তার পাঠানো টাকার বিষয়ে ভিকটিম এবং তার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তারা টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেননি। পরবর্তীতে পারিবারিক মীমাংসায় মোজাম্মেলকে ভিকটিমের পরিবার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এসব নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দিলে দুই সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখে ভিকটিম রুপা গোপনে (মোজাম্মেল হকের বোনের সতিনের ছেলে) জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনাডুলি গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে মো. উজ্জল মিয়ার (২৬) সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামে বাসবাস করতে থাকেন। ওই ঘটনায় তারা সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিধায় প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিম জনি আক্তার রুপাকে তাদের দুটি সন্তানদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য নিজ গ্রামে আসার অনুরোধ করেন।

সে মোতাবেক ভিকটিম জনি আক্তার রুপা গাজীপুর থেকে মোজাম্মেলের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। বিকাল ৪টার দিকে ভিকটিম জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌঁছার পর মোজাম্মেল তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিসিভ করে এবং তাকে নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর চরে তার এক বন্ধুর বাসায় বসে আলাপ-আলোচনা করার জন্য রওনা করেন। মোজাম্মেল পূর্বেই তার বড় ভাই জহির আলীকে একটি নৌকা নিয়ে মাদারগঞ্জ থানার জামথৈল ঘাটে আসতে বলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই ভাই ভিকটিমসহ জামথৈল ঘাট হতে নৌকাযোগে যমুনার চরে যাওয়ার পর তারা প্রথমে ভিকটিমকে তার সঙ্গের ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং মোজাম্মেল তার সঙ্গে আনা দা দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে রুপার লাশ বালিভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়।

এদিকে স্ত্রীর কোনো খোঁজ না পেয়ে রুপার দ্বিতীয় স্বামী উজ্জল মিয়া বাদী হয়ে ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার থেকে উল্লিখিত জিডির বিষয়টি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে জানালে গাজীপুরের পিবিআই জিডির অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে ভিকটিম জনি আক্তার রুপা হত্যা হয়েছে মর্মে সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে এ সংক্রান্তে স্বামী মো. উজ্জল মিয়া বাদী হয়ে এজাহার করেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলাটির নিবিড় তদন্ত তথা অনুসন্ধানকালে ২ মাস ২৪ দিন পর ৩০ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। ৩১ মার্চ তারা গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর