দীর্ঘ ১৫ বছরেও উদঘাটিত হয়নি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা ছত্তার মুন্সির সন্তান মনির (১৮) হত্যা রহস্য। নৃশংস এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই পটুয়াখালীর ডিবি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর মূলতবি হয় মামলাটি।
প্রভাবশালী মহলের চাপ আর পুলিশের ভূমিকায় পরিবারের অন্য সদস্যরা নিরাপত্তার কথা ভেবে চুপসে যান বলে স্থানীয়দের ধারণা। এরপর মামলার ফাইলে ধূলির আস্তর পড়েছে। অজ্ঞাত কারণে হত্যা মামলাটি নিয়ে একেবারেই নিষ্ক্রীয় পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে নয় বার। সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের এসআই মোসলেহ উদ্দিন। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, খুনের ঘটনা সত্য। পুলিশী কৌশলে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। ভবিষ্যতে উদঘাটনের সম্ভাবনা কম থাকায় মামলাটি মূলতবি রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে মনিরকে মৎস্য বন্দর আলীপুরে পানের দোকান থেকে অজ্ঞাতরা ডেকে নেয়। পরদিন বিকেলে বাজারের পূর্বদিকে বিলে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি কাঠের মুগুর, মনিরের একটি দাঁত, রক্তমাখা মাটি উদ্ধার করে। ওইসময় ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। পুলিশ পর্যায়ক্রমে সাত আসামিকে গ্রেফতার করে। নৃশংস এ খুনের প্রতিবাদে তখন আলীপুর-কুয়াকাটায় বিক্ষোভ হয়। সাতদিন দোকানপাটে কালো পতাকা উত্তোলন করে এলাকাবাসী। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি 'হিমাগারে' চলে যায়।
সংসারের উপার্জনক্ষম সন্তান খুনের পরে বার্ধক্যের ভারে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা ছত্তার মুন্সি। সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে অনেক আগেই ইহলোক ছেড়েছেন তিনি। মনিরের বৃদ্ধা মা লাইলী বেগম সন্তানের কথা স্মরণ করে কেঁদে কেঁদে এক বছর আগে তিনিও এ জগৎ ছেড়েছেন।
মনিরের মেঝভাই মো. জাকির হোসেন মুন্সী বলেন, বাবা-মা দু'জনেই ছোট ভাইয়ের শোকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেঁদেছেন। বিচারের আশায় থাকতে থাকতে পৃথিবী ছেড়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কলাপাড়া ইউনিট কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন ও সদস্য হাবিবুল্লাহ রানা ফের এ হত্যাকান্ডের নতুন করে তদন্তের দাবি করেছেন। তারা বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ডেকে নিয়ে খুন করে ফেলা হবে আর ১৫ বছরে তার বিচার হবে না- এ কোন স্বাধীন বাংলাদেশ? খুনিরা কত বড় ক্ষমতাধর যে আইনের হাত তাদেরকে ছুঁতে পারে না?
বিডি-প্রতিদিন/০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ