আগামী ২৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারনা তুঙ্গে। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহর-বন্দর-গ্রাম। সর্বত্র বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। একইসঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে নগরী, জেলার দশ উপজেলা এবং ৮৫ ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনী সভা করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মইদুল ইসলামের আনারস প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছেন।
অপরদিকে প্রথমে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও পরবর্তীতে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আলতাফ হোসেন ভুলু বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে সভা করছেন। এছাড়া তিনি চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ভোট চাইতে। খান ভুলু অভিযোগ করেন, তার ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ না করতে ভোটারদের ফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. মইদুল ইসলামের পক্ষে প্রচারনায় অংশ নেয়া বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার বানারীপাড়ায় এবং রবিবার বাকেরগঞ্জে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে নগরীর ভাটিখানায় তার বাসায় সিটি করপোরেশন, সদর উপজেলা এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। পরদিন বুধবার আলোচনা সভা হবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় কোন প্রার্থীর পক্ষে তারা ভোট চাইছেন না। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মইদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা হওয়ায় সেসব সভায় অংশগ্রহন করছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আলতাফ হোসেন ভুলুর দাবি- বিজয় দিবসের আলোচনা সভার আড়ালে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থী মইদুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাইছেন। ওইসব আলোচনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে সাথে নিয়ে ভোট চাইছেন। যা নির্বাচনী আচরণ বিধির সম্পূর্ন লংঘন। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রিটার্নিং অফিসারকে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন খান ভুলু। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে সরকারি এমপি সহ সুবিধাপ্রাপ্তদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে বিজয় দিবসের আলোচনা করছি। এটা কোন নির্বাচনী সভা নয়। এমনকি বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে সরকারি ডাকবাংলোও ব্যবহার করছেন না। নিচ্ছেন না অন্য কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কোন সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন থেকে এলাকা ছাড়তে বলা হলেও তিনি এবং সভাপতি হাসানাত এমপি সেই নির্দেশ মানছেন না- বিদ্রোহী প্রার্থীর এমন অভিযোগের বিষয়ে এমপি ইউনুস বলেন, সারা দেশে ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাহলে তারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন? তিনি বলেন, এলাকায় থাকলে যদি সমস্যা হয়, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থী কিংবা নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য তাদের বিদেশ পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুক। তাহলে তারা এই সময়ের জন্য বিদেশে গিয়ে অবস্থান করবেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, খান আলতাফ হোসেনের দুটি অভিযোগ পেয়েছেন। যাতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া কোন প্রার্থী কিংবা তার কর্মী-সমর্থক যাতে আচরনবিধি ভঙ্গ না করে, সেগুলো দেখার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে চার জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোন ভিআইপি’কে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার বলেন, নির্বাচনী বিধিতে বলা হয়েছে কোন অতি গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি কিংবা মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে পারবেন না।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ