দীর্ঘ ৫৭ বছরেও রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং হয়নি। তাই হারিয়ে গেছে হ্রদের নাব্যতা। পলি জমে জমে ভরাট হয়ে গেছে হ্রদের তলদেশ। ফলে হ্রদের গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে আশংকাজনক হারে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে গড়ে উঠছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবনও। এসব অবৈধ স্থাপনার মধ্যে বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।
হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভাসমান টিলায় আশেপাশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজর বসতি। তাই নৌ-পরিবহন, বিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদনসহ হ্রদের অস্থিত্ব রক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা। তাই উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটিতে অবস্থিত এটি। যার আয়তন ৭২৫ বর্গকিলোমিটার।
কিন্তু হ্রদটি সৃষ্টির পর একবারও ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। হ্রদ এলাকায় গড়ে উঠা জেলা ও উপজেলা শহরের স' মিল, মিলিং মিল, ফিলিং স্টেশন, জেটিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল এবং হোটেল, বসবাড়ি, রেস্তোঁরাসহ আবাসিক এলাকার অসংখ্য বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে। তাই কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে ক্রমে সংকট বাড়ছে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে হ্রদের অস্থিত্ব।
রাঙামাটি পৌরসভা পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হ্রদ ঘেঁষে উভয় তীরে অনেকটা বেপরোয়াভাবে গড়ে উঠছে বিভিন্ন বসবাড়ি। এসব কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে হ্রদটি। কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
এদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে জুড়ে অবৈধ স্থাপনাগুলোর বর্জ্য নিক্ষেপ, মল-মূত্র ত্যাগসহ নানা কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি ও পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে বলে দাবি করেন পরিবেশবাদীরা।
শানিংহিলের নির্বাহী পরিচালক (পরিবেশবাদী) মো. আলী জানান, পর্যটন শহর রাঙামাটি। তার একটা বিরাট অংশ কাপ্তাই হ্রদ। প্রায় প্রতিদিন নৌ-ভ্রমনে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। নৌ-ভ্রমনে আসা পর্যটকদের চিপসের প্যাকেট, পলিথিন, আবাসিক হোটেল, রেস্তোঁরা, বসতঘরের অসংখ্য বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে। তাতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে হ্রদের পানি।
অন্যদিকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়াতে এবং রাঙামাটির বিভিন্ন নদীপথে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক ও হ্রদের নাব্যতা ধরে রাখতে সাতটি পয়েন্টে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কথা থাকলেও এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
রাঙামাটি-২৯৯ আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানান, বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে হ্রদের গভীরতা। ফলে লেকে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। উভয় তীরে অব্যাহত ভাঙনসহ প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে হ্রদে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদ দখল করে বাড়িঘর নির্মাণসহ নানাভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে হ্রদকে। এসব কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে হ্রদটি।
বিডি প্রতিদিন/৩১ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা