সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চৈদুয়ার গ্রামে বিয়ের দাবিতে নয় দিন ধরে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন এক তরুণী। গত মঙ্গলবার থেকে প্রেমিক সাদ্দামের বাড়িতে অবস্থান নেয়া তরুণীকে শত শত মানুষ দেখতে আসলেও বিষয়টি সুরাহায় কেউ এগিয়ে আসছে না। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চৈদুয়ার গ্রামে ছয় বছর আগে আতাহার আলীর ছেলে কৃষক আল-আমিনের সাথে পাশ্ববর্তী শিয়ালকোল ইউনিয়নের বড় হামকুড়িয়া গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে আঁখি খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের ১ বছর পর তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করায় স্বামী আল-আমিন আঁখিকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো।
আঁখি খাতুন শ্বশুর বাড়ির পাশে রফিকুল ইসলাম ওরফে ইসমাইল সরকারের ছেলে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের ছাত্র সাদ্দাম হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক দৈহিক সম্পর্কে গড়ায়। সাদ্দাম বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আঁখি খাতুনের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি জানাজানি হলে সম্প্রতি আঁখি খাতুনকে স্বামী আল-আমিন তালাক দেয়।
পরে আঁখি খাতুনের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রেমিক সাদ্দাম হোসেনের পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তাদের পরিবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এ অবস্থায় প্রেমিক সাদ্দাম হোসেন নানা টালবাহানার পাশাপাশি অন্যত্র বিয়ে করার চেষ্টা করে।আঁখি খাতুন জানতে পেরে বিষপান করে।সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে চার দিন চিকিৎসা শেষে আঁখি খাতুন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
গত ১৩জুন সকাল ১০টায় বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিক সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে অবস্থান নেয় আঁখি খাতুন। এ সময় প্রেমিক সাদ্দাম কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সে ওই বাড়িতে অনশন অব্যাহত রেখেছেন। সাদ্দামের পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে আঁখি খাতুনকে বার বার বের করে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় বিয়ে না হলে আত্মহত্যা করবে বলে ছেলের পরিবারকে হুমকি দিয়েছে প্রেমিকা আঁখি খাতুন।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সাদ্দামের পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপও চোখে পড়েনি।
আঁখি খাতুন বলেন, সাদ্দাম হোসেনের সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। সে বিয়ের কথা বলে আমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়েছে। কিছুদিন ধরে বিয়ের কথা বললে সে কৌশলে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। আমি স্বামী-সন্তান ছেড়ে সাদ্দামকে ভালবেসেছি। এখন সে আমার সর্বনাশ করে অন্যত্র বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে। সাদ্দামের বিয়ের খবর শুনে আমি তার বাড়িতে চলে এসেছি। সে বিয়ে না করা পর্যন্ত এ বাড়ি থেকে যাবো না। আর বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব।
এ বিষয়ে সাদ্দামের পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে বাড়িতে নাই। আমি এই মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে গ্রহণ করবো না। এতে আমার বিরুদ্ধে মেয়ের পরিবার যা পারে তাই করুক। আমার ছেলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাওয়া বেগম জানান, চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাসুদেব সিনহা বলেন, ছেলের বাড়িতে প্রেমিকার অনশনের ঘটনাটি শুনেছি। এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২১ জুন, ২০১৭/ফারজানা