যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিপদ সীমার ৫২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। আবার করালগ্রাসী যমুনার কবলে পড়ে অনেকে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পানিবন্দী মানুষগুলো অসহায়দের মত জীবনযাপন করছে। বন্যা কবলিতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। সরকার থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জানা যায়, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে যমুনা তীরবর্তী উত্তরের কাজিপুরের মাছুয়াকান্দি, ক্ষুদবান্ধি, শুভগাছা, সদরের বাহুকা ও ভাটিতে এনায়েতপুর বামগ্রামন ও শাহজাদপুরের কৈজুরী ইউপির হাটপাঁচিল এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে সহস্রাধিক বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব জায়গা-জমি না থাকায় ভাঙ্গনকবলিতরা নিঃস্ব ওয়াপদার ধারে আশ্রয় নিয়েছে।
খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন চলছে। আবার এসব এলাকায় ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়ী। এদের রাত-দিন কাটছে আতঙ্কে। কখন যেন যমুনা তাদের শেষ সম্বলটুকু গ্রাস করে নেয়। তবে এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, পানি বৃদ্ধির কারণে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালী বেলকুচি ও শাহজাদপুরের কয়েক সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো অনেক স্থানে তা পৌঁছায়নি। স্কুল কলেজে-পানি ওঠায় ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানিতে চলাফেরা করায় অনেক হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে।
শাহজাদপুর কৈজুরী ইউপির হাটপাচিল গ্রামের বুলবুলি বেগম, সোলেমান, সাইদুল জানান, সকালে বসতবাড়ী ঠিকই ছিল। কিন্তু রাতে যমুনার ভাঙ্গনে অধিকাংশ চলে যায়। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ছেলে মেয়েকে নিয়ে যা পেরেছি তা সরিয়ে নিয়েছি। একই গ্রামের জলিল ও হানিফ জানান, নদী তীরে বসতভিটা যেভাবে ভাঙ্গছে কখন যে সব কিছু নদী গ্রাস করে নেয় এমন আতঙ্কে সব সময় থাকতে হচ্ছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ জানান, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ৫ শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ব্যবস্থা নেয়া তো দুরের কথা পাউবো খোঁজ নিতেও আসেনি।
কাজিপুরের ঢেকুরিয়া গ্রামের স্কুল ছাত্র নয়ন জানান, বাড়িতে পানি ওঠেছে। পঁচা পানিতে হাত-ঘা দেখা দিয়েছে। সারাক্ষণ শুধু চুলকায়। খুব কষ্ট লাগে। একই কথা জানালেন বাহুকা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম।
কৈজুরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গনের বিষয়টি পাউবো ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, ৬৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্যা কবলিত পাঁচটি উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ৫ কেজি চাউল, ১ কেজি চিড়া, ১ কেজি লবন, ১ কেজি চিনি, ডাল দিয়াশলাই, মোমবাতি ও মুড়িসহ ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলো আজকালের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। এছাড়াও জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপজেলাওয়ারী দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষনিক বন্যা কার্যক্রম মনিটরিং এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে। তিনি আরো জানান, বন্যায় যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় তা মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশালী সৈয়দ হাসান ইমাম পেইঞ্জ জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাউবো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। হাঁটপাচিল ভাঙ্গনের বিষয়ে বলেন, হাঁটপাচিল ভাঙ্গন রোধ করতে বহু টাকার প্রয়োজন। পাউবো'র এতো ফান্ড নেই।
বিডি প্রতিদিন/১১ জুলাই ২০১৭/হিমেল