উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পুড়ে গেছে সামিয়ার শরীর। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন সে। সামিয়ার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ। ‘ও’ নেগেটিভ রক্তের সংকটের কথা ছড়িয়ে পড়লে এই রক্তের গ্রুপের ৪০০ জন রক্তদাতা এসেছিলেন হাসপাতালে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জরুরি রক্তের চাহিদা মেটাতে হাসপাতালে নিয়মিত রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদানে আগ্রহী এমন অনেকে নিয়মিত হাসপাতালে রক্তদান করেন। এসব রক্তের ব্যাগ নির্ধারিত নিয়ম মেনে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুর্ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা আহত রোগীদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে ব্লাড ব্যাংকের সংরক্ষিত রক্তে তা সামলানো সম্ভব ছিল না। রক্তের সংকটের খবর ছড়িয়ে পড়তে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিজে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসে রক্ত দান করতে। ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্য হুমায়ের আহমেদ বলেন, রক্ত দেওয়ার জন্য শত শত মানুষ হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন। তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে নাম, বয়স, রক্তের গ্রুপসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নিবন্ধন করা হয়। তবে রক্তদাতাদের অধিকাংশের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ডমাইকে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের জন্য আহ্বান জানান। যাদের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপের, তাদের এগিয়ে আসতে বলা হয়। রক্তদানে আগ্রহীদের তথ্য নিবন্ধন করছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের খোঁজে আসতে থাকেন অনেক অভিভাবক। কিন্তু রক্তদাতাদের অধিকাংশের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা থেকে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতারা আসতে থাকেন হাসপাতালের সামনে। একটা বুথে মঙ্গলবারে ‘ও’ নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের ২৫০ জন নাম ও নম্বর নিবন্ধন করিয়েছেন বলে জানান তিনি। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের দায়িত্বরত এক কর্মী জানান, উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি সামিয়া নামে এক রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ। কিন্তু ব্লাড ব্যাংকের তখন পর্যাপ্ত ‘ও’ নেগেটিভ রক্ত ছিল না। এমনিতেই নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট থাকে। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এ বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে এই রোগীর জন্য ৪০০ জন ‘ও’ নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপধারী নিজ উদ্যোগে রক্ত দিতে এসেছিলেন ব্লাড ব্যাংকে।’ রক্তদানের জন্য মৌলভীবাজার থেকে এসেছিলেন খালেদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। এ গ্রুপের রক্তের সংকট আছে এমন খবর শুনে দ্রুত ছুটে এসেছি। তবু যদি একটা শিশুর উপকার হয়।’ রক্তদাতাদের উদ্দেশে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আহত রোগীদের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদিতে আসা মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে এখন পর্যাপ্ত রক্ত মজুদ রয়েছে। আপাতত আর রক্তের প্রয়োজন নেই।