জুলাই সনদের খসড়া আজ সোমবারের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের মতামত দিতে হবে। এরপর ঐকমত্য কমিশন চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে তা প্রকাশ করবে। এর আগে গত শনিবার ১৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, জুলাই সনদের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে, নাকি পরে ঘোষণা করা হবে? তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সব রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা- দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা।
গত শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৪টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন- এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।’ জাপা নেতার বক্তব্য অনুযায়ী জুলাই মাসেই ভোটের তারিখ ঘোষণা হবে। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদের আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আভাস দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে গতকাল মোস্তফা জামাল হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কথায় পরিষ্কার বোঝা গেছে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিতে চাইছেন এবং এ মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটা ঘোষণা করতে চান। ঘোষণাটা জুলাই সনদের আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে, তাতে কিছু আসে যায় না। প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচকভাবে বলেছেন, এটাই বড় কথা।
রাজনৈতিক দলের ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এ মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গন্ডগোল সৃষ্টি করছে। যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি, তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বরাবরই চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা এবং সেই অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নের পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। একই দাবি জামায়াতে ইসলামীর। বিএনপি জুলাই সনদ ঘোষণার দাবির সঙ্গে একমত হলেও তারা সনদ ও সংস্কারের সময়সীমা নিয়ে কথা বলছে না। দলটি শুরু থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলটি চায়, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক মৌলিক সংস্কার শেষ করে ভোটের আয়োজন করুক। পরবর্তী সংস্কারের কাজ গণতান্ত্রিক সরকার এসে করবে। দলটির মূল বক্তব্য হলো- লন্ডন বৈঠক অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন কিন্তু তারিখ বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেননি। বিএনপি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জুলাই সনদ কবে হবে? সরকার কি সনদের আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে? বিষয়টি নিয়ে এখনো দ্বিধা কাজ করছে। যদিও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ আগে থেকেই বলে আসছেন ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তারা জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে চান। গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম বৈঠকের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত। সোমবারের (আজ) মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে খসড়াটি পাঠানো হবে। রাজনৈতিক দলগুলো মতামত জানালে সেগুলো এতে সন্নিবেশিত করা হবে। বড় ধরনের মৌলিক আপত্তির বিষয় না থাকলে বৈঠকে আর আলোচনা হবে না। যে কোনোভাবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করতে হবে। সবার মতামত পাওয়ার পর সেগুলোকে সন্নিবেশিত করে চূড়ান্ত জুলাই সনদের পটভূমি, প্রাথমিক বক্তব্যসমূহ, অঙ্গীকার এবং প্রক্রিয়ার বিষয়বস্তুগুলো অন্তর্ভুক্ত করে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরা হবে। সেটাই হবে জুলাই সনদ। তবে তিনি আরও জানান, ১০টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেলেও কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট আছে এবং সাতটি বিষয়ে আলোচনা হলেও তা অসমাপ্ত রয়েছে। তিনটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।