রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। আরেকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে গতকাল সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পাঁচ যুবক। তিনি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েক দিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসে। শুক্রবার রাত ৮টায় তারা আবার ওই বাসায় যায় স্বর্ণালংকার আনতে। এ সময় বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এদিকে রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক তিন নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার রাতে সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। এ ছাড়া একই অভিযোগে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের দুই নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কতিপয় ব্যক্তি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে যায়। সেখানে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতা জানে আলম অপু ও আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। গতকাল আদালত সূত্র জানায়, আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও ইব্রাহিম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগে আবদুর রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান। পরে শুনানি শেষে আদালত রাজ্জাকসহ চারজনকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। অপরজন প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাকে গাজীপুর টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গুলশান থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটির নেতা আবদুর রাজ্জাক ও কাজী গৌরব অপু সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলতে থাকেন, টাকা না দিলে গ্রেপ্তার করাবেন। তখন শাম্মী আহমেদের স্বামী তাদের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। আবারও আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করতে যান। আসামিরা সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকেন। মামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা বাদীকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান এবং ৫০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা এনে আসামিদের দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় গিয়ে তার ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান থানায় জানানো হলে আসামিরা সেখান থেকে চলে যান। পরবর্তীতে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় রিয়াদের নেতৃত্বে অন্যরা ফের বাদীর বাসার সামনে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। দারোয়ান মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানালে বাদী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন আসামিরা হুমকি দেন- দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় গুলশান থানা পুলিশকে আবারও জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।