ঠাকুরগাঁওয়ের সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি মালবাহী ট্রাকসহ নদীতে ভেঙ্গে পড়ায় শহরের সাথে লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবীসহ নানা পেশার মানুষ।
অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি বাঁশের সাকোঁ নির্মাণ করেছে। কিন্তু এলাকার কিছু বখাটে যুবক পারাপারের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন পথচারী ও সাধারণ মানুষরা।
কলেজ শিক্ষক খোদা বকস ডাবলু জানান, দীর্ঘদিন যাবত এলাকার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি সংস্কারেরর দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ নজরে নেননি। ফলে অবহেলার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছিলো। অবশেষে ভারী যানচলাচল নিষেধ থাকা সত্ত্বেও একটি কয়লা বোঝাই ট্রাক উল্টে ব্রিজসহ নদীতে পড়ে যায়। আমরা দ্রুত ব্রিজ মেরামত ও বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
পরীক্ষার্থী সুজন, মিরাজ, একরামুল জানান, আমাদের পরীক্ষা চলছে কিন্তু ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সময় মত ক্লাস রুমে যেতে পারছি না। একটি বাশেঁর সাকোঁ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু টাকা ছাড়া কাউকে যেতে দিচ্ছে না কয়েকজন মানুষ।
মহসীন আলী নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সেনুয়া নদীর ওই পাড়ে প্রায় ১০টি ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই ব্রিজটি। ওইসব এলাকা থেকে প্রতিদিন কাচাঁ সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য শহরে আসে। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় ব্যবসাসহ নানা রকম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও শহরের বরুনাগাঁও নামকস্থানে সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি অবস্থিত। দীর্ঘদিন আগেই ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। শহরের ঠিকাদার রামবাবুর ভাটায় কয়লা নেওয়ার সময় দশ চাকার ট্রাকটি অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙ্গে যায়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝুঁকিপূর্ণ সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি দিয়ে একটি কয়লা বোঝাই ট্রাক ফাঁড়াবাড়ি এলাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে ব্রিজের উত্তর পাশের অংশ ট্রাকসহ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে। ব্রিজটি পারাপারের সময় একজন পথচারী আহত হন।
ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মন জানান, সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি অনেকদিন আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও ওই ব্রিজটি দিয়ে মানুষ ভারী যানবাহন নিয়ে চলাচল করছিল। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে। ব্রিজ মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত ব্রিজ মেরামত করে যানচলাচলের জন্য স্বাভাবিক করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেক মানুষের অসুবিধা হয়েছে। তা মেরামতের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনদিনের মধ্যেই পাশেই একটি বিকল্প ব্রিজ নির্মানে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০-২৫ বছর আগে নদীর উপর বাঁশের সাকোঁ ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ৭৬ মিটার লম্বা সড়ক ও জনপদ বিভাগ এখানে একটি বেইলী ব্রিজ নির্মাণ করে। পরে ব্রিজসহ ওই রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কাছে হস্তান্থর করা হয়। কিন্তু এলজিইডি সেটি দীর্ঘদিনেও সংষ্কার করেনি।
বেইলী ব্রিজটি অত্যন্ত পুরাতন ও জীর্ণ হওয়ায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল এতদিন। ব্রিজের লোহার পাত গুলো মরিচায় আক্রান্ত হয়ে পাতলা হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে অনেক আগেই। অবিরাম যানবাহন চলাচলের ফলে এখানকার লোহার পাটাতনগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে।
কর্তৃপক্ষ এ ব্রিজের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সেদিকে এতদিন কারো নজর আসেনি। প্রত্যহ অসংখ্য ভারী যানবাহন ওই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করলে ব্রিজটি দুলতে থাকে। এ অবস্থায় পথচারীসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্রিজে উঠতে ভয় পায়।
ভারী যানবাহনের চালকরা বিষয়টি জেনেও নিয়ািমত চলাচল করেছে ওই নড়বড়ে ব্রিজের উপর দিয়ে। তাদের মতে, কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে অন্য সড়ক দিয়ে শহরে যেতে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। এতে সময় ও খরচ বেশি পড়তো। তাই সময় মত চলাচলের জন্য চালকরা ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করছিল।
অপরদিকে, গত বছর বর্ষার সময় এই বেইলী ব্রিজটি ভারী যানবাহনের ভারে ভেঙ্গে যায়। সে সময় পথচারী ও শিক্ষার্থীরা নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে শহরে যাতায়াত করেছে। জেলার দায়ীত্বে থাকা মন্ত্রী পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের নির্দেশে সে সময় এলজিইডি ৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে বেইলী ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করে চলাচলের সামান্য যোগ্য করে গড়ে তুলে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এ বেইলী ব্রিজের স্থলে নতুন একটি ব্রিজ নির্মানের প্রকল্প প্রস্তাব উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠালেও দীর্ঘদিনেও সে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/ ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান