বর্ষার শুরুতেই পাহাড় যেন পায় নতুন প্রাণ। সবুজে মোড়ানো পাহাড়, টলমলে ঝর্ণা, কুয়াশায় ঢাকা চূড়া—মন ছুটে যায় প্রকৃতির কোলে। পাহাড়পিপাসুদের কাছে বর্ষার পাহাড় মানেই এক টুকরো স্বপ্ন। তবে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিপদের ছায়া। সামান্য অসাবধানতা, সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত নিমিষেই আনন্দের ভ্রমণকে রূপ দিতে পারে আতঙ্কে।
সম্প্রতি পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনার খবরও সামনে এসেছে। খেয়াল না রাখলে বিপদের ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ। তাই পাহাড়ে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা ও মানা একান্ত জরুরি।
নিয়মিত পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণপ্রেমী সানজানা ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ধস, আকস্মিক বন্যা, পিচ্ছিল পাথরে পা পিছলে যাওয়া—নানা কারণে বর্ষায় পাহাড় ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। নিজের জীবনকে সবার ঊর্ধ্বে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অতি উচ্ছ্বসিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং অবশ্যই ভালো ট্র্যাকিং শু সঙ্গে রাখা দরকার। যেহেতু বর্ষায় সাপ-বিচ্ছুর পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও ওষুধ সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—ঝর্নায় ঝাঁপ না দেয়াই ভালো যদি সাতার না জানেন। এমনকি সাতার জানলেও ঝরনার নিচের গভীরতা নির্ণয় না করে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। এতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
কী কী বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন?
এ বিষয়ে বিডি ট্যুর লাভার এর প্রধান নির্বাহী নাইমুল হাসান বলেন, “বর্ষাকালে ভ্রমণ করতে গেলে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা অনেক সময় বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ি এলাকা বা ঝর্ণার ধারে যেতে পছন্দ করি। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে— যেসব এলাকা বন্যাপ্রবণ, যেসব পাহাড়ে ধসের সম্ভাবনা বেশি, সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত। আর নদী বা পাহাড়ি পথ ধরলে অবশ্যই আগে থেকে স্থানীয়দের কাছ থেকে জায়গার অবস্থা জেনে নিতে হবে। কারণ, স্থানীয় মানুষই জানেন কোন জায়গা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
আরেকটা জিনিস খুব জরুরি— আবহাওয়ার খবর। আমরা অনেকেই তেমনভাবে খোঁজ নেই না, কিন্তু বর্ষাকালে যাত্রার আগে আবহাওয়া অফিসের আপডেট দেখা খুব দরকার। যদি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকে, তাহলে সেই যাত্রা বাতিল বা পেছানোই ভালো। জীবন তো একটাই— সেটা আগে।
ব্যাগের কথাও বলতে চাই। বর্ষার বৃষ্টিতে আমাদের ব্যাগে থাকা কাগজপত্র, জামাকাপড়, ইলেকট্রনিক্স— সব কিছু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ও রেইনকভার থাকা চাই। আর ভ্রমণে গেলে ফার্স্ট এইড কিট অবশ্যই রাখতে হবে। ছোট খাট আঘাত, জ্বর, মাথাব্যথা, এলার্জির ওষুধ— এগুলো সঙ্গে থাকা দরকার। ORS আর মশার ওষুধও ভুললে চলবে না।
মোবাইল যেন পুরো চার্জ করা থাকে, পাওয়ার ব্যাংক নিতে হবে। স্থানীয় গাইড বা হেল্পলাইন নম্বর জেনে রাখা খুব জরুরি। আর খাবার-পানির দিকেও নজর দিতে হবে। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে না রাখলে বিপদ হতে পারে— বিশেষ করে যেখানে হঠাৎ দোকান বা খাবার পাওয়া যায় না।
সবচেয়ে বড় কথা— নদীর ধার বা কোনো ব্রিজের কাছে গেলে সতর্ক থাকতে হবে। বৃষ্টির সময় নদীর স্রোত বেড়ে যায়, ব্রিজ পিচ্ছিল হয়। এমন জায়গা পার হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলাই নিরাপদ। তিনি বলেন, আনন্দ করার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ভ্রমণ হোক আনন্দের, কোনো বিপদের নয়।”
বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন সতর্কতার বার্তা
- বর্ষাকালে পাহাড়ে ভ্রমণের আগে বিশেষজ্ঞরা এসব দিক মাথায় রাখতে বলছেন:
- পূর্বাভাস জেনে বের হোন।
- রেইনকোট ও ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ রাখুন।
- স্লিপ রোধী জুতা পরুন।
- ব্যাকআপ খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন।
- ফার্স্ট এইড কিট নিতে ভুলবেন না।
- সাপ-বিচ্ছুর উপদ্রব ও জোঁকের কামড়ের কথা ভেবে লবণ ও কীটনাশক রাখুন।
- স্থানীয় গাইড ছাড়া দুর্গম এলাকায় যাবেন না।
- বর্ষার পাহাড় হতে পারে দারুণ অভিজ্ঞতার উৎস, যদি আপনি নিরাপত্তাকে সঙ্গী করেন। মনে রাখবেন, সচেতনতাই প্রকৃত আনন্দের মূল চাবিকাঠি।
বিডি প্রতিদিন/আশিক