চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে ঘরোয়া ফুটবলের আরেকটি মৌসুম শুরু হলো। বসুন্ধরা কিংস শিরোপা জিতেই নতুন যাত্রা শুরু করল। দেশের জনপ্রিয় এ ক্লাবটির চ্যাম্পিয়ন হওয়া কোনো ঘটনা নয়। পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর তারা একের পর এক শিরোপা জিতেই চলেছে। প্রসঙ্গটা মূলত চ্যালেঞ্জ কাপের ভেন্যু নিয়ে। গত মৌসুম থেকে চ্যালেঞ্জ কাপের যাত্রা। ফুটবলে একটি আসর বেড়েছে তা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। তবে দ্বিতীয় আসরের ভেন্যু নিয়ে যে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই ফুটবলের সু-খবর হতে পারে না।
বাফুফে নিয়ম করে দিয়েছে, যে ক্লাব লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে তাদেরই হোম ভেন্যুতে চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপার লড়াই হবে। আগেরবার বসুন্ধরা কিংস লিগ জিতে ছিল বলেই তাদের হোম ভেন্যু কিংস অ্যারিনায় চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপার লড়াই হয়েছিল। এবার ঢাকা মোহামেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাদের হোম ভেন্যু কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হয়। কিংস আগেবারের মতোই মোহামেডানকে উড়িয়ে শিরোপা ধরে রেখেছে। গ্যালারির সৌন্দর্যের কথা বাদই দিলাম। কুমিল্লায় যে ভেন্যুতে খেলা হয়েছে সেই মাঠে কি ফুটবল হয়? এতটা অনুপযোগী ছিল যে, যারা খেলা দেখেছেন তারা বলতে বাধ্য হয়েছেন, এর চেয়ে পাড়া-মহল্লার মাঠ ভালো। কী যে অব্যবস্থাপনা তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। দেশের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ চলছে, সেই সঙ্গে ঘাসও কাটা হচ্ছে। যা বিশ্ব ফুটবলে বিরল ঘটনা বললেও ভুল হবে না। এমন দৃশ্য যদি ফিফাকে পাঠানো হয়, যাদের হোম ভেন্যু সেই ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের কী হবে? আর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে ধারণা কী হবে? বেহাল দশা বলেই কাঠমান্ডু দশরথ স্টেডিয়ামে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। কুমিল্লা স্টেডিয়াম যদি পরিদর্শন করত, তাহলে কখনো এই স্টেডিয়াম ফুটবল ম্যাচে অনুমতি পেত কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ কাপে কুমিল্লা মাঠের বেহাল দশার জন্য দায়ী কে? অবশ্যই মোহামেডানকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কেননা, এটা তো তাদেরই হোম ভেন্যু। সময় যখন এগিয়ে আসছিল তখন মোহামেডান থেকে বলা হচ্ছিল তারা চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচটি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করতে চায়। ভালো কথা, অনেক দিন পর পরিচিত এ স্টেডিয়ামে লোকাল ফুটবলের হাইভোল্টেজ ম্যাচ দেখা যাবে। পরে জানা গেল কী, মাঠ পেতে নাকি আবেদনই করা হয়নি। তখন তো কুমিল্লা ছাড়া কোনো গন্তব্য ছিল না।
ম্যাচ তো আর কিংস অ্যারিনায় হতে পারে না। বিষয়টি যখন নিশ্চিত ম্যাচ হবে কুমিল্লায়। তখনো মাঠ উপযোগী করে তোলার জন্য সময় ছিল। অথচ এত বড় ম্যাচ আয়োজনে অনুমতি নিতে গড়িমসি করায় এ হাল। তাও নাকি মাঠ পাওয়া যেত না, একজন বর্ষিয়ান সংগঠকের হস্তক্ষেপে পাওয়া যায়। ম্যাচের আগে যে সময় ছিল এর মধ্যে ঘাস কেটে পানি দিয়ে ম্যাচের উপযোগী করা যেত।
সত্যি কথা বলতে কী, এ ক্ষেত্রে মোহামেডানের এমন দায়িত্বহীনতা সত্যিই রহস্যময়। মাঠ যে খেলার উপযোগী নয়, তা ম্যাচ রেফারিও বলেছেন এবং অব্যবস্থাপনার নোটও নিয়েছেন। কিংস ইচ্ছা করলেই মাঠের বেহাল দশা দেখে খেলতে আপত্তি জানাতে পারত। কিন্তু ফুটবলের স্বার্থের কথা ভেবে খেলেছে। আর যতটুকু সংস্কার করা হয়েছিল তা নাকি কিংসের উদ্যোগেই। কিছু ক্লাব কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার কারণে মোহামেডানের ইমেজও নষ্ট হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে- এমন মাঠ ফুটবলের জন্য কতটা নিরাপদ? ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের উচুঁ-নিচু মাঠে ফুটবলাররা যে বড় ইনজুরির শিকার হননি এটাই ভাগ্য। চরম অব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচটি হয়েছে। যার পুরো ব্যর্থতা মোহামেডানেরই। নির্ধারিত সময় পর
ম্যাচ শুরু হয়েছে। উপায় ছিল না, তখনো যে ঘাস কাটা চলছিল। এমনকি ম্যাচ চলা সময়েও তা চলছিল। যে লম্বা লম্বা ঘাস তাকে জঙ্গল বললেও ভুল হবে না। কর্নার শর্ট নিচ্ছে, দেখা যাচ্ছে ফুটবলারের পা ঘাসে আটকে যাচ্ছে। থ্রোতেও একই অবস্থা। পুরস্কারের মঞ্চ তো আগেই প্রস্তুত হওয়ার কথা। দেখা গেল ম্যাচ চলা অবস্থায় কাঠমিস্ত্রিরা কাজ করছেন। সবচেয়ে বড় কথা এমন জঙ্গল অবস্থা মাঠে সাপ, বেজিও থাকতে পারে। যদি কোনো অঘটন ঘটত, এর দায়িত্ব নিত কে?
একটা বিষয় না বললেই নয়, বড় ফুটবল ম্যাচ ঢাকায় হওয়ায় অনেকে আক্ষেপ করে বলতেন দেশের ফুটবল শুধু ঢাকাতেই বন্দি। বাফুফে নাম বদলে ঢাফুফে রাখা উচিত। এখন তো
আর সেই অবস্থা নেই। পেশাদার লিগ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। ফাইনালও হয়, তাহলে ঢাকার বাইরে ভেন্যুর এ করুণ দশা কেন? বিশেষ করে কুমিল্লায় যে মাঠে চ্যালেঞ্জ কাপ হয়েছে তাকে আতঙ্কই বলতে হয়। কথায় কথায় দেশের ফুটবলে অবনতির কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, যোগ্য ফুটবলার আসছে না। মাঠ যদি অযোগ্য হয় তাহলে যোগ্য ফুটবলার মিলবে কীভাবে? তাহলে কি ধান খেতে ফুটবল চর্চা করতে হবে। মোহামেডান যে উদাহরণ তৈরি করল তা দেশের ফুটবলের জন্য অশনিসংকেত বলা যায়। এ ক্ষেত্রে আবার বাফুফে দায় এড়াতে পারবে না। যে ক্লাব তাদের হোম ভেন্যু বেছে নেয়, সেখানে কখনো কি কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান মাঠ খেলার উপযোগী কি না? এ কুমিল্লা মাঠই লিগে মোহামেডানের হোম ভেন্যু। বিষয়টি কি বাফুফে গুরুত্বসহকারে দেখবে?