মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে আগ্রহী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ১০ শর্ত দেয় মালয়েশিয়া সরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া এক চিঠিতে শর্তগুলো জানানো হয়। তবে এই ১০ শর্তের মধ্যে তিনটি শিথিল করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গত ৪ নভেম্বর দেশটির সরকারকে দেওয়া এক চিঠিতে শর্ত শিথিলের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ছাড়া মালয়েশিয়া সরকার ১৪ নভেম্বরের মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠানোর কথা বলেছিল। এই সময়সীমাও বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম দফায় সাত হাজার কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির নির্মাণ ও পর্যটন খাতে এসব কর্মী নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ খাতের চাহিদাপত্র পেলেও এখন পর্যন্ত পর্যটন খাতের কোনো চাহিদাই বাংলাদেশ পায়নি বলে জানিয়েছেন ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম। একই সঙ্গে প্রথম ধাপের তালিকা করা সাত হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র তিন হাজার কর্মী আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে চাহিদা পাওয়ার পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও আমাদের জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকা করা ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের জানানোর চেষ্টা করেছি। এর মধ্য থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য মাত্র তিন হাজার কর্মী আবেদন করেছেন। মালয়েশিয়ার কম্পানি তাঁদের উচ্চতা, বয়স ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে নির্মাণ খাতের জন্য বাছাই করছে। আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। আমরা মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণরতদের পাঠানোর চেষ্টা করব। এরপর বাকিদের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়েও চিঠি দেওয়া হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকারের শর্তে ছিল, কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সির ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের অফিস থাকতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ এজেন্সির এত বড় অফিস নেই। তাই এই শর্ত শিথিল করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরকটি শর্ত ছিল—কর্মী পাঠানোয় আগ্রহী এজেন্সিগুলোর নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার থাকতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ রিক্রুটিং এজেন্সি প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো (টিটিসি) ব্যবহার করে থাকে। তাই এই শর্ত শিথিল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া এজেন্সিগুলোর পাঁচ বছরে তিন হাজার কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিয়েছিল মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই শর্তও শিথিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার সরকারের এই ১০ শর্ত শুধু বাংলাদেশকে নয়, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও মায়ানমারকেও দেওয়া হয়েছে। ওই দেশগুলোও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে থেকে বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। একাধিকবার বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত সুফল আসেনি। বাজারটি যাতে চালু হওয়ার পর আবার সিন্ডিকেটের দখলে না গিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়, তা নিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রথম দিকে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে নজর দিয়েছে মালয়েশিয়া।
তবে জুড়ে দেওয়া ১০ শর্ত পূরণ করা মানে আবারও এই শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের কবলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এটি ঠেকানোর জন্যই তিন শর্ত শিথিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপসচিব) মুহাম্মদ শওকাত আলী।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর।
২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়, সর্বশেষ কর্মী গেছে গত বছরের ৩১ মে। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রায় ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তাদের মধ্য থেকে সাত হাজার ৮২৩ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে মালয়েশিয়ার সরকার। এরই মধ্যে তাঁদের সে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে নতুন কর্মী নিয়োগ এখনো বন্ধ। সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম