করোনা-পরবর্তী সময়ে নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশ কিছু রোগীকে প্রথমে সাধারণ মেনিনজাইটিস ভেবে চিকিৎসা করা হয়। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁরা অ্যামিবার সংক্রমণে আক্রান্ত। রোগ চিহ্নিত হতে দেরি হওয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
কেরালায় এই অ্যামিবার প্রকোপ আরও বেশি। গত দেড় বছরে সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ১২০ জন, শুধু চলতি বছরেই ৫৯ জন আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ তুলনামূলক কম হলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সচেতনতা না বাড়লে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, আইডি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে তাঁরা নিয়মিত এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগী পাচ্ছেন। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি, খিঁচুনি, বমি, অসংলগ্ন আচরণ। এগুলো মেনিনজাইটিসের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় রোগ শনাক্তে দেরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ডায়াবেটিস, কিডনি, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অ্যামিবাটি মূলত উষ্ণ ও মিষ্টি জলে জন্মায়। অপরিষ্কার পুকুর, নদী বা দীর্ঘদিন ধরে শোধন না করা সুইমিং পুল থেকে এটি ছড়াচ্ছে। নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে দ্রুত মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র নষ্ট করে ফেলে মৃত্যুর কারণ হয়।
স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে সন্দেহজনক রোগীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে। তবে কার্যকর টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় চিকিৎসায় সফলতা সব সময় আসছে না।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেছেন, অপরিষ্কার পুকুর বা নদীতে ডুব না দেওয়া, শোধিত জল ছাড়া নাক-মুখ পরিষ্কার না করা এবং সুইমিং পুলে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করলেই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
বিডি প্রতিদিন/আশিক