মামলা ও হয়রানির ফলে ব্যবসায়ীদের আস্থা ভেঙে যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন না, বরং আগের বিনিয়োগও ধরে রাখা নিয়ে চিন্তায় আছেন। ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে এবং আর্থিক খরচ বাড়ছে। এতে কর্মসংস্থান বাড়ার বদলে স্থবির হয়ে পড়ছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমাচ্ছে বা নতুন কর্মী নিচ্ছে না। এই প্রভাব সরাসরি প্রবৃদ্ধি ও শ্রমবাজারে পড়ছে।
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আস্থার সংকট। অনেক সময় নীতির ধারাবাহিকতা থাকে না। ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা চালাতে পারবেন কি না—এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এটাই মূল বাধা, আর এই আস্থা না ফিরলে অন্য সব উদ্যোগ তেমন ফল দেবে না।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিও এই পরিস্থিতিতে থমকে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিচ্ছে না বা আগের কর্মচারী নিয়োগ কমাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের প্রবৃদ্ধি ও শ্রমবাজারে।
ফলে উৎপাদন বাড়ানো, রপ্তানি সম্প্রসারণ, নতুন ব্যবসা তৈরি—এসব লক্ষ্যও এখন অনিশ্চিত।
প্রথমত, মামলা-হয়রানির অবসান ঘটাতে হবে। একটি স্বচ্ছ ও দ্রুত নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কর ও শুল্কনীতিতে পূর্বানুমানযোগ্যতা আনতে হবে—হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলানো যাবে না। তৃতীয়ত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয়।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি না হলে বিনিয়োগ-টু-জিডিপি অনুপাত স্থবির থাকবে, ফলে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, বেকারত্ব বাড়বে। আর যদি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে এবং মূল্যস্ফীতি না কমে, তাহলে মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হলে উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরানো একান্ত প্রয়োজন।
একই সঙ্গে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ তৈরি করা, শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কার্যকর প্রণোদনা প্রদান। এই পদক্ষেপগুলো ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে, নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধিকে সচল রাখবে।
দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাত। উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা ও আস্থা পুনঃস্থাপন ছাড়া শিল্প ও কর্মসংস্থান চাঙ্গা করা অসম্ভব। তাই এখনই সময় উদ্যোগী হওয়া, যাতে ব্যবসায়ীরা দেশে থেকে নতুন বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হন, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরে আসে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)