৭১-এর যুদ্ধকালীন সময়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরের সরচাপুরে নিত্যদিন সন্ধ্যায় নেমে আসত হানাদার বাহিনীর বর্বরতা। লাইনে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হতো নিরপরাধ মানুষকে। হত্যার পর খরশ্রোতা কংশ নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠতো হানাদাররা। সেই নির্মম ইতিহাস স্মরণ করলে আজও গা শিউরে ওঠে বলে জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ হাকিম সরকার।
৭১-এর উত্তাল যুদ্ধের শুরু থেকে ৯ ডিসেম্বর ফুলপুর মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল সরচাপুরের এই জায়গাটি। ওই সময় রামসোনা গ্রামের ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫১ জন, পয়ারী গ্রামের চৌধুরী বাড়ির ১০ জন, বারইপাড়ার মা-পুত্র, ডাকুয়ার পিতাপুত্র ও সরচাপুরের এই বধ্যভূমিতে অগণিত মানুষকে লোমহর্ষকভাবে হত্যা করা হয়।
নিহত শহীদদের স্মরণে বাংলা ১৪০৬ সালের ১২ চৈত্র সরচাপুরের এই জায়গাটিতে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধন করেন, পাঁচবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি ভাষা সৈনিক মরহুম এম শামছুল হক। ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহযোগিতায় স্তম্ভটি নির্মাণে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই। ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ এলেই শুধু এর প্রতি একটু নজর দেয়া হয়। তাছাড়া সারা বছর অযত্ন অবহেলায়। বর্তমানে এর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পশ্চিমপাশে নদী ভাঙনে মাটি সরে যাওয়ায় হুমকির মুখে স্তম্ভটি। শীঘ্রই কোন ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় কংশ নদীতে ধ্বসে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারে ৭১-এর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই স্মৃতিস্তম্ভ।
বিডি প্রতিদিন/১০ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল