নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোটের তিন দিন আগেই এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছে আওয়ামীগ প্রার্থীর আত্বীয়-স্বজনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। আজ বিকেলে বনপাড়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নুর বাবুর সহধর্মিণী মহুয়া নুর কচি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে নেতা-কর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান মেয়র কেএম জাকির হোসেনের নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে মোট ৩৩ টি লিখিত অভিযোগ করেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নিতে তিনি দেখেন নি।
এমনকি বড়াইগ্রাম থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। মহুয়া নুর কচি মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন তাকে এবং তার কর্মী সমর্থককে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের সময় তাকে ও তার কর্মীদেরকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কেএম জাকির হোসেনের ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান জিন্নাহ ও জামিল সহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা অব্যাহতভাবে বাধা দিচ্ছে। কোথাও ভোট চাইতে গেলে সশস্ত্র অবস্থায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে প্রার্থীকে বহনকারী গাড়িতে লাথি মারাসহ তাদেরকে দ্রুত এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার প্রচারণা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এমনকি গত ১৭ ডিসেম্বর রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনে বাধাদানের বিষয়টি স্বচক্ষেই দেখেছেন বলে তিনি জানান। নৌকার সমর্থকদের হুমকির কারণে নির্বাচনের মাত্র দশদিন আগেও পৌরসভার ১ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ধানের শীষের একটি পোষ্টারও লাগাতে দেয়া হয়নি। অনেক জায়গায় ধানের শীষের লাগানো পোষ্টার ছিঁড়েও ফেলা হয়েছে। প্রচারণার সময় বিভিন্ন এলাকায় গেলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামীরা মোটরসাইকেল নিয়ে হুমকি দিয়ে এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক মহিলা নেতাকর্মীদের পাঠিয়ে হৈ চৈ করে প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো অভিযোগ করে জানান, নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে নৌকা প্রার্থী কেএম জাকির হোসেন প্রায় সব সময়েই ২০ থেকে ২৫ টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে মিছিল করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়াও প্রচারণার কাজে তিনি নিয়মিতভাবে অনেক রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মাইকও ব্যবহার করছেন। এসব অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি প্রার্থী কচি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে মোট ৩৩টি লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বনপাড়া পৌরসভার নির্বাচন করার ব্যাপারে দাবি জানানো হয়। এছাড়া মাঝগাঁও ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল আলীমও একই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
এসময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, জেলা প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হজরত আলী, বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সরদার রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনা পারভীন, সিংড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক আব্দুস সালাম মোল্লা ও বড়াইগ্রাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এসব অভিযোগের ব্যপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে পৌরবাসী নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন দেখেই বিএনপি প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় জেনে এসব মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন। তিনি কোন আচারণ বিধিও লঙ্ঘন করছেন না বলে জানান।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, প্রথম দিকে বিএনপি প্রার্থীর দেয়া অভিযোগগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বাধাদান সহ হুমকি-ধামকি দেয়া ব্যক্তির নাম পরিচয় ও দিন সময় উল্লেখ না থাকায় সে গুলোর তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে সঠিকভাবে করা অভিযোগগুলো বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করা হয়েছে বলে জানান। এছাড়াও তিনি নিজে বনপাড়ায় অবস্থান করে প্রতিনিয়ত সকল প্রার্থীর নির্বাচনী আচারণবিধি সহ প্রচারণার এবং আইন শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে দেখভাল করছেন। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহারিয়ার খান তদন্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৯ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল