প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে লসএঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ডালাস, ওয়াশিংটন ডিসি, মিশিগান, শিকাগোসহ ৫০ স্টেটেই একযোগে দুই সহস্রাধিক প্রতিবাদ-মিছিল চলার মধ্যেই রবিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছেন ডেমক্র্যাট-শাসিত সিটিসমূহে গ্রেফতার অভিযান আরো বেগবান করার জন্যে। ‘কারণ এসব সিটিকে অবৈধ অভিবাসীরা জাল ভোটেও অংশ নিচ্ছে এবং ডেমক্র্যাটদের বিজয় ত্বরন্বিত করছে। ওরা আমেরিকানদের কাজ ছিনিয়ে নিচ্ছে। চিকিৎসা-সেবার অর্থেও ভাগ বসাচ্ছে। ট্যাক্স প্রদানকারী সিটিজেনদের উচিত অবৈধদের ধরিয়ে দেয়া’। দলীয় প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বিরোধী দল শাসিত স্টেটে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনার প্রকাশ্য নির্দেশ প্রদানের এ ঘটনায় স্তম্ভিত বিবেকসম্পন্ন আমেরিকানরা। ‘আর এভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে স্বৈরাচার-শাসকে পরিণত করেছেন’-মন্তব্য ডেমক্র্যাটদের। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করেছেন, অভিবাসীদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারের চলমান প্রক্রিয়াকে এতটাই জোরদার করা দরকার-যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য, ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার দিন থেকেই চলছে এই অভিযান। যদিও নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ‘শুধুমাত্র ক্রিমিনাল অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের। কিন্তু গত ৫ মাসে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের ঘটনায় যারা কোন ধরনের অপরাধে লিপ্ত নেই তাদেরকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে আইনী লড়াইও চলছে।
এদিকে, সরকারী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত সংবাদে রবিবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, নগদ এক হাজার ডলারসহ ফিরে যাবার টিকিট প্রদানের ঘোষণার পর ১০ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে গেছেন। ‘সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ’ নামক আরেকটি থিঙ্কট্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি ৫৪ লাখ (১৫.৪ মিলিয়ন) অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। এর ৫০% এর আগমন ঘটেছে গত চার বছর বাইডেনের শাসনামলে। কারণ, সে সময়ে বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমের পরই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারীগণকে ডিটেনশন সেন্টারের পরিবর্তে প্যারলে মুক্তির ঘটনা ঘটেছে। বাইডেন প্রশাসনের এহেন উদারনীতি জানার পর সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে দক্ষিনের সীমানা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে। সে সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছিল যে তারা ক্ষমতায় ফিরলে এহেন অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটাবেন। সেই অঙ্গিকারেরই বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। উল্লেখ্য, স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের ঘটনা আরো ক’বার ঘটেছে। ১৯৫৪ সালে প্রেসিডেন্ট আইজেন আওয়ার অভিবাসন বিরোধী অভিযান চালিয়েছিলেন। সে সময় গ্রেফতারের চেয়ে দশগুণ বেশী অবৈধ অভিবাসীর স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার ঘটনা ঘটেছিল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর অবৈধ অভিবাসীদেরকে রেজিস্ট্রেশনের বিধি চালু করা হয়েছিল। সে সময়েও অসংখ্য অভিবাসী স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন।
ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানের কট্টর সমর্থক ‘সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ’র পক্ষ থেকে রবিবার বলা হয়েছে, দেড় কোটির অধিক অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার ও বহিষ্কার করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই অবৈধদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখলে (বিনামূল্যে চিকিৎসা-সেবা বন্ধ, ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসহীনদের বাসা ভাড়া দেয়া বন্ধ, ওয়ার্ক পারমিট নেই এমন অভিবাসীগণের টেলিফোনের সীম কার্ড বাতিল, কাজ প্রদানকারিদের জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি) স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগ্রহ বাড়বে। আর এসব ব্যবস্থার কথা বিদ্যমান আইনেই রয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের ফলে পুনরায় ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টিভিতে বিজ্ঞাপণ দেয়া হবে। ‘সিবিপি ওয়ান অ্যাপ’র মাধ্যমে নিজের নাম লিখিয়ে পকেট খরচ বাবদ এক হাজার ডলারসহ ফিরতি বিমানের টিকিট সংগ্রহের আহবান জানানো হবে। এ দিকে, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ট্রাম্পের কঠোর নীতি অবলম্বনের ফলে গত চারমাসে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে এবং কমপক্ষে ৭ লাখ ৭৩ হাজার বিদেশী বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কর্মস্থলে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে ১০ লাখের অধিক।