বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় এবার মরিচ চাষ করে খুশি কৃষকরা। বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় তৃপ্তির হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে। চলতি মৌসুমে স্থানীয় কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া, উদয়কুঁড়ি, পান্ডারপাড়াসহ উপজেলার বেশকয়েকটি গ্রামের কৃষকরা বিঘাকে বিঘা জমিতে এবার শীতকালীন মরিচের চাষ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজে ছেয়ে আছে মরিচের ক্ষেতগুলো। কোথাও কোথাও যা চোখের দৃষ্টিসীমাকেও ছাপিয়ে যায়। সেসব ক্ষেত থেকে দল বেঁধে মরিচ উঠাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। এসময় কথা হয় চাষি ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বংশ পরস্পরায় একজন কৃষক। স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভের আশায় প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন মরিচ। বিজলী জাতের এই মরিচ চাষে প্রতি বিঘায় তার ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রায় চার মাস আগে এই মরিচ চাষ করেন তিনি। লাগানোর ৫০-৫৫ দিনে দিনের মাথায় টাল থেকে মরিচ উঠানো শুরু হয়। পনের দিন পরপর ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। কোন কোন সময় ১০ দিন পরও উঠানো যায় ক্ষেতের মরিচ। কয়েকদিন আগে পাঁচ বিঘা জমি থেকে প্রায় ১২০ মণ কাঁচা মরিচ উঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা করে মরিচ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত বা টাল থেকে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত মরিচ উঠানো যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর বলেও তিনি বলেন।
উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের সেলিম রেজা, মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই এলাকার অনেক কৃষক পরিবার এবার কম-বেশি জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে পনের দিন পরপর প্রায় ২০-২৫ মণ হারে মরিচ উঠানো যায়। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ ২০০০-২২০০ টাকা হারে বিক্রি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই মরিচ প্রতি মণ ৬০০০-৬৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে ১৬০০-১৮০০ টাকায় প্রতি মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান।
কৃষক শাহ আলম ও বাদশা মিয়া বলেন, শীতকালীন হিসেবে মরিচের চাষ এবার ব্যাপক ভাল হয়েছে। শুরু থেকেই ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের মাঝখানে বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক মরিচ ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়। তবে পরবর্তীতে সিংহভাগ ক্ষেতের মরিচ গাছ ঠিক হয়ে যায়। তারা আরও জানান, এক বিঘা জমির বিপরীতে সর্বমোট ৪৫-৫০ হাজার মত ব্যয় হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ ব্যয় পড়ে শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ। কারণ মরিচ গাছগুলো ঠিক রাখতে প্রায়ই প্রতিদিনই নিয়মানুযায়ী ওষুধ ও স্প্রে করতে হয়। সর্বোপরি ক্ষেতের গাছগুলোর দিকে তিক্ষ্ম নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়। সবমিলে এবার মরিচ চাষ করে খুশি তারা।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এই উপজেলাটি সবজি খ্যাত বলে পরিচিত। এখানকার অনেক কৃষকই তাদের জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। শীতকালীন মরিচের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া কৃষক তার উৎপাদিত মরিচের দামও অনেক ভাল পাচ্ছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব