চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত ‘খিরসাপাত’ জাতের আম জিআই’ (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে গেজেট জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিবন্ধন পেলে সুস্বাদু জাতের এই আম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম’ নামে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে পরিচিতি লাভ করবে।
এই আমের মিষ্টতার পরিমাণ, আকার, ওজন ও অন্যান্য বৈশিষ্টও আদর্শ। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম যা দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘হিমসাগর’ নামে পরিচিত। সম্ভাবনা বিবেচনা করে ও আমেরস্বত্ব (প্যাটেন্ট) সুরক্ষার চিন্তা থেকেই ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হামিম রেজা জানান, নিবন্ধনের ব্যাপারে তারা পুরো ২০১৭ সাল জুড়েই কাজ করেছেন। তারা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে, খিরসাপাত জাতটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব। তাই খিরসাপাতকে নিবন্ধন আবেদন তালিকার শীর্ষে রাখা হয়। কারণ এ জাতটি সবচেয়ে স্বসাদু ও সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত হয় এবং দেশে ও বিদেশে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মধ্যে প্রথম জিআই জাত হিসেবে খিরসাপাত অন্তর্ভুক্ত হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা জাতের আমের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী। পরবর্তিতে এ দুটি জাতও জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা জেলাবাসীর জন্য খুবই আনন্দের একটি ব্যাপার। সেই সাথে জিআই পণ্য হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের নিবন্ধন এ জাতটির চাষ ও ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে। এতে উৎপাদন বাড়বে এবং আম কেন্দ্রিক অর্থনীতির বিকাশ হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, ‘আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ শিরোনামে জেলা ব্রান্ডিং করা হচ্ছে। ব্রান্ডিং এর অংশ হিসেবে জেলার গুরুত্বপূর্ণ জাতের আমগুলোকে জিআই পণ্য হিসাবে নিবন্ধনের কাজ চলছে। এরমধ্যে খিরসাপাত জাতটি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই এর নিবন্ধন (জিআই নং) পাওয়া যাবে। খিরসাপাত আম জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলে জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। সেই সাথে এটি জেলার নিজস্ব পন্য হিসেবে গন্য হবে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলায় উৎপাদিত মোট আমের প্রায় ১২ শতাংশই খিরসাপাত জাতের। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এ আমকে হিমসাগর নামে চেনে। তবে জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলে সকলে জানবে এ আমের প্রকৃত নাম ‘খিরসাপাত’ এবং সেই সাথে জেনে যাবে এ আমটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের। তিনি আরও জানান, জুনের প্রথম সপ্তাহে খিরসাপাত আম বাজারে চলে আসে। এ আমের প্রায় ৭১ ভাগ খাদ্যযোগ্য অংশ, ঘ্রাণ সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু । সে কারণে দেশ বিদেশে এ আমের বেশ চাহিদা রয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান