উদ্যোগ ও সংরক্ষনের অভাবে নাটোরের সাত রাজকন্যার গ্রাম নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা লাহিড়ীপাড়ার ইতিহাস হারিয়ে যেতে বসেছে।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এই গ্রামে ২২ জমিদারের বাস ছিল। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী নাটোরের রানী ভবানীর কন্যাসহ ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয় এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্রের সাথে। জমিদারদের বংশধরদের কেউ কেউ এখনও এই গ্রামে বাস করলেও তাদের সাধারণভাবেই জীবন কাটাতে হচ্ছে।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিশাল হালতি বিলের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে এই খাজুরা লাহিড়ী পাড়া গ্রাম। সাত রাজকন্যার গ্রাম বলেই পরিচিত এই গ্রাম। জেলা সদর থেকে এই গ্রামের দুরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। নলডাঙ্গা উপজেলা সদর থেকেও এর দূরত্ব প্রায় সমপরিমাণ। এই গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্র শামাকান্ত লাহিড়ী,উম্মেকা কান্ত লাহিড়ী,সুরেন্দ্র নাথ লাহিড়ী,রঘুনাথ লাহিড়ী,সুরেন্দ্র মোহন লাহিড়ী ও জীতেন্দ্র নাথ খাঁ এর সাথে ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয়।
স্থানীয়রা জানান, নাটোরের মহারানী রানী ভবানীর মেয়ে রাজকন্যা তারা সুন্দরীর বিয়ে হয় এই গ্রামের জমিদার রঘুনন্দন লাহিড়ীর সাথে। জমিদার শামাকান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন দুই রাজকন্যাকে। প্রথম স্ত্রীর কথা কেউ বলতে না পারলেও শামাকান্ত লাহিড়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কন্যা ইন্দুবালা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর জমিদারপ্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর জমিদারদের সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে। এসময় অনেকেই ভারতে চলে যান। জমিদারদের দু একজন বংশধর এখনও সেই স্মৃতি ধরে রেখে জীবন পারি দিচ্ছেন। প্রায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব পরিবার।
জমিদার শ্যামাকান্ত লাহিড়ীর বংশধর রনজিত কুমার লাহিড়ী বলেন,তার দাদু শামাকান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন দুই রাজকন্যাকে। তাদের দুজনেই ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কন্যা ইন্দুবালাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার দাদু। তাদের পাশের জমিদার উম্মেকা কান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন তাহেরপুরের জমিদার কন্যাকে। তার দাদু শামাকান্ত লাহিড়ী জীবিত থাকাকালীন সময়ই জমিদারপ্রথা উচ্ছেদ হয়।দাদুর মৃত্যুর পর তার বাবা নরেশকান্ত লাহিড়ী জমিজমা বিক্রি করে বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। পরে সরকার জমিদার সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে তাদের পরিবারের দুর্গতি নেমে আসে। যে টুকু আছে তাও সংস্কারের অভাবে ধংস হয়ে যাচ্ছে। এখন কোনভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মামুনুর রশীদ এবং ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুকুমার দাস জানান,দেশ ছেড়ে যাওয়ায় ওই জমিদারদের জমিজমা ও বাড়িঘর প্রায় দখল হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছ । সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে লাহিড়ীপাড়া গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য। তারা জমিদারদের ইতিহাস সহ জমিদারদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
একই সাথে তারা সাত রাজ কন্যার গ্রাম হিসেবে পরিচিত খাজুরা লাহিড়ী পাড়া গ্রামের এই ২২ জমিদারের ইতিহাস সংরক্ষন করে রাজসিক নাটোরের ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্বসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে তারা এই গ্রামকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন,বিষয়টি প্রথমবারের মত জেনেছেন। বিষয়টি জানার পর এলাকায় নিজে সরেজমিন গিয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ও জমিদারদের বংশধরদের সাথে কথা বলবেন এবং ইতিহাস সংগ্রহের জন্য একজন শিক্ষককে ওই গ্রামে পাঠাবেন বলে জানান তিনি।
বিডিপ্রতিদিন/ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান