ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলায় ফসলে প্রতিবছর প্রায় ৭ কোটি টাকার কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে কিন্তু তাদের সচেতন করার কোন উদ্যোগ নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে মাঝে মধ্যে কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ধান, পাট ও শাক-সবজির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবজি চাষের জন্য বেশ খ্যাতি রয়েছে।
সারাদেশে যে পরিমাণ সবজির আবাদ হয় তার অন্তত ১৫-২০ ভাগ উৎপাদন হয় এ জেলায়।
সূত্র মতে, এ জেলায় গত বছর ১২ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ধান, ৬ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে পাট ও ৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এসব ফসল আবাদের সময় ব্যাপক হারে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
সদর উপজেলার কহরপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল জাব্বার জানান, তাদের এলাকার ধান চাষের সময় প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ২০০ গ্রাম করে তরল কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রতি তিন দিন অন্তর কীটনাশক স্প্রে করা হয়।
এতে এক মৌসুমে সবজি ক্ষেতে বিঘা প্রতি তরল কীটনাশকের দরকার হয় গড়ে ২ কেজি।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি বছর ফসলের ক্ষেতে অন্তত ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহৃত হয় ধান ক্ষেতে। এছাড়া পাট, ফুল, সবজি ও আমের মুকুলেও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এ জেলার মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি উৎপন্ন হয় তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলি জমিও হারাচ্ছে উর্বরতা। কৃষকদের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় তারা দিন দিন এর প্রতি নিভর্রশীল হয়ে পড়ছেন।
অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা জমিতে ইচ্ছামতো কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। কতটুকু জমিতে কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত কিংবা ফসল তোলার কতদিন আগে সবজি ক্ষেতে কীটনাশক দেয়া বন্ধ করা দরকার সে ব্যাপারে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন ধারণা নেই।
ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের কর্মকর্তারা ফসলের জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষকদের নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তারা এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের ডা: তোজাম্মেল হক জানান, কীটনাশক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ খাদ্যের সঙ্গে কীটনাশক মিশ্রিত শাকসবজি খায় তাহলে ওই ব্যক্তি প্রথমেই পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হবেন। এজন্য কীটনাশক ব্যবহারের ব্যাপারে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা