নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলামের ওপর ‘ময়লা’ হামলার নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগ নেতা আল মাহমুদ আদরের (২৩) এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রবিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রায় এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৬০ জন আইনজীবী আসামী আদরের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। এ সময় রিমান্ডের পক্ষে ও জামিনের বিরোধিতা করে তাদের রোষানলে পড়েন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাহমিনা ইয়াসমিন রত্না। ফলে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় উত্তেজিত আইনজীবীরা অ্যাডভোকেট রত্নাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রিমান্ডের আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলামের ওপর ‘ময়লা’ হামলার মামলা তদন্তকালে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে গত ৭ মার্চ আসাসি আল মাহমুদ আদরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতিপূর্বে এক মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসাসি মিনহাজ আহম্মেদ ফাহিম ও মোবারক হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি আল মাহমুদ আদরের নাম প্রকাশ করেছেন। যা যাচাই বাছাই করিয়ে আসামি আদরকে ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এবং তার উপস্থিতি ও নেতৃত্বে ঘটনাটি সংঘটিত হয়। এবং সে এই ঘটনার 'মাস্টার মাইন্ড' বলিয়া জানা যায়।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আদর ঘটনার জড়িত থাকার কথা প্রকাশ করিলেও ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এলোমেলো কথাবার্তা বলে এড়িয়ে যায়। তাঁর কথাবার্তা ও গতিবিধি সন্দেহজনক। এতে প্রতীয়মান হয় সে কৌশলে অনেক তথ্য গোপন করিতেছে। এক্ষেত্রে আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়া গেলে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত অপরাপর আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ পূর্বক গ্রেপ্তার ও আসামিদের ব্যবহৃত কাপড় চোপড় ও মাস্ক উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বিধায় ৫ দিনের রিমান্ড চান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আদালতে আসামি আদরের পক্ষে শুনানিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট শাহাজাহান ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান তারেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের টিটুসহ ৬০ জন আইনজীবী অংশ নেন। তারা রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে বাদীপক্ষ কোন আইনজীবী নিয়োগ না দেয়ায় আদালতের সিএসআই রিমান্ডের আবেদনে অংশ নেয়। তাঁর সঙ্গে শুনানিতে অংশ সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাহমিনা ইয়াসমিন রত্না।
আদালতে তাহমিনা ইয়াসমিন রত্না বলেন, ''আসামিরা শক্তিশালী একটি চক্র। শুধু অধ্যক্ষ অপদস্থ হয়েছে তাই নয়, এর আগেও নরসিংদীতে একই ধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাইনা নরসিংদীতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটুক। রিমান্ড মঞ্জুর করলে এ ঘটনার পিছনের হোতাকে তা বেরিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রায় এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফলে উত্তেজিত আইনজীবীরা আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। সাধারণত আইনজীবীরা এরূপ আচরণ করেন না। তাহলে এর নেপথ্যের গডফাডার কে?''
বিডি-প্রতিদিন/১০ মার্চ, ২০১৯/মাহবুব