২০১৮ সালের ১২ মার্চ ছিল এক ভয়াল দিন। এই দিনটিতে নেপালে বিমান বিধস্ত হয়ে মারা যান অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে একজন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। ঘটনার ১০ দিন পর লাশ দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। পারিবারিক সিদ্ধান্তে ফয়সালের কবর হয় গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে পূর্ব মাদারীপুর কলেজের পাশের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়।
ঘর থেকে বের হয়েই কবর দেখেন ফয়সালের বাবা-মা। ছেলের জন্য দোয়া করেন মহান আল্লাহর কাছে।এক বছর হলো ছেলের মুখ থেকে আর মা ডাক শুনতে পারছেন না। ছেলে হারানোর শোক যেন মায়ের বুকেই বইছে সর্বদা। এক বছর পার হলেও মায়ের চোখের জল থামেনি একদিনের জন্যও। ফয়সালের কোন বন্ধু বান্ধব দেখলে কিংবা সাংবাদিকতার পেশার কাউকে দেখলেও কান্না আরও বাড়ে।
বৃদ্ধ পিতার বুকেও রয়েছে ছেলে হারানোর চাপা কষ্ট। দুই চোখ খুঁজে বেড়ায় শুধু ফয়সালের স্মৃতি। বিধস্ত বিমানের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ইউএস ডলার সহায়তা পেয়েছিলেন ফয়সালের পরিবার। এরপর এক বছর আর কেউ তাদের কোন খোঁজ খবর নেননি।
নিহত সাংবাদিক ফয়সাল একজন আদর্শবান, সাদা মনের মানুষ ছিলেন। সে জন্য প্রতিবেশি, বাল্যবন্ধু ও পরিচিতজনেরাও ভুলতে পারেনি তাকে। স্থানীয়রা তাকে নিয়ে গর্ব করতেন। এখনো করেন। বিনয়ী নম্র-ভদ্র ও বন্ধুসুলভ হওয়ায় বাড়ির পাশের কলেজের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীরাও তাকে ভালবাসেন। ভালবাসেন খেটে খাওযা সাধারণ মানুষও।
সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ ছিলেন অবিবাহিত। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। আর ভাইদের মধ্যে বড় হওয়ায় উপার্জনে তখন চলত সংসার। ফয়সালের মৃত্যুর পর তার ছোট দুই ভাই এর মধ্যে একজন ইতালি প্রবাসী হয়েছেন, অন্যজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন ফয়সালের বাবা সামছুদ্দিন সরদার। ফয়সালের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারেন না এখনও স্বজন ও স্থানীয়রা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা