খুনের ঘটনার জের ধরে মাদারীপুরে কমপক্ষে ৩০ কিশোরীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ আকনের বাড়িসহ কমপক্ষে ৫০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নে সাহেবালী মাতুব্বর নামে এক ব্যক্তির খুনের ঘটনার জের ধরে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ। প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও এই এলাকার দুটি বাজারও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ঘটছে চুরির ঘটনাও। এই এলাকার নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম আতঙ্কের মাঝে। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় দুর্বৃত্তরা একাধিক কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতনও করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে কমপক্ষে ৩০ কিশোরী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে এবং পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে মামলাও করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরসহ ২৫টি ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ আকনের বাড়ি। এসময় কমপক্ষে ২৫টি ঘর পুড়ে সম্পুন্ন ছাই হয়ে গেছে। লুটপাট করা হয়েছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিও। ঘরের দরজা জানালা, শ্যালো মেশিনও নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। কয়েকশ একর জমির ফসলও নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাহেবালী মাতুব্বরকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুন করা হয়। ঘটনার পর কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আকনসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার পর থেকে সদর উপজেলার পাঁচখোলা ও কালিকাপুর ইউনিয়নের সহাস্রাধিক মানুষ মামলা হামলার ভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগে প্রতিপক্ষের লোক জন দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শফিক আকন, এজাজ আকন, সেলিম আকন, জহির আকন, তেলাম আকন, লতিফ ফরাজী, টিটন আকন, জলিল বেপরীর বসত ঘরসহ ২৫টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও সরোয়ার বেপারী ইয়াকুব মিয়া, সেলিম মাতুব্বর, ওবায়দুল মাতুব্বর, দেলোয়ার মাতুব্বর, আউয়াল মাতুব্বর, নজরুল মাতুব্বর, জসিম মাতুব্বর, শহিদুল ইসলাম, হেমায়েত মোল্লা, বাবুল হাওলাদার, খালেক আকনের বাড়িসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার এবং পাঁচখোলা ইউনিয়নের আনন্দবাজার নামে দুটি বাজার ছিলো। খুনের ঘটনার পরে বাজার দুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাজারে দোকারপাটের কোন অস্থিত্ব নেই। রাস্তার পাড়ে দোকানের কয়েকটি খুঁটি দাড়িয়ে আছে।
রিজিয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, ওরা আমার বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার পরনের কাপড় ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। যারা অপরাধ করছে তাদের বিচার হোক। আমাদের বাড়ি ঘর কেন পোড়াবে? আমাদের মতো নিরীহ মানুষের বাড়ি ঘর কেন ভাঙচুর- লুটপাট করে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্কুল ছাত্রী বলেন, আমরা স্কুলে গেলে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। রাতে বেলায় আমার ভয়ে থাকি। ওরা এসে আমাদের ঘরের বাইরে নিয়ে খারাপ কাজ করে। অনেকে এখন স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ কেউ চলে গেছে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। আমরা এর বিচার চাই।
মাদারীপুর সদর থানার এসআই শ্যামল বলেন, আমার চেষ্টা করছি দুই পক্ষকেই শান্ত রাখার। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে মামলা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আইনগত সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবো।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা