টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে বন্যা।
জেলার আদিতমারী মহিষখোচা ও হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারীর ধুবনী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ পানির তোড়ে ভেঙে গেছে।
এদিকে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করায় নদীটির চরাঞ্চলে বিশেষ সর্তকতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান।
শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তার পানি প্রবাহ দোয়ানি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৫২.৮৫ সেন্টিমিটার।
আর ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে হাতীবান্ধার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এ সময় তিনি পানি বন্দি লোকজনের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। ভাঙা রাস্তা মেরামতের জন্য ৫ হাজার বালির বস্তা বরাদ্দ দেন তিনি। এছাড়াও জেলায় ৬৮ টন চাল ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এলাকাবাসী জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ৫ দিনের ভারি বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। জেলার ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের নৌকা বা ভেলা ছাড়া সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধেয়ে আসছে পানির স্রোত। এতে বড় সমস্যায় পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা।
চার দিকে অথৈ পানির কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে অনেকটা বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা। গত দুই দিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
গড্ডিমারী ইউনিয়নের ছয়আনী গ্রামের খাদেম আলী জানান, গত তিন দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। কোনও প্রকার ত্রাণ পাইনি।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা চর এলাকার লোকজনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম