বাগেরহাটের ফকিরহাটে সরকারি রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শিম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারি রাস্তার দুই পাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই শিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথমবারের মত এই পদ্ধতিতে শিম চাষ করা হয়।
কৃষি বিভাগ বলছে, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রাস্তার পাশে শিম চাষে আগ্রহী চাষিরা।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারি রাস্তার পাশে দুই কিলোমিটার জুড়ে পরীক্ষামূলকভাবে শিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু থেকে এই জাতের শিমের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন। রাস্তার পাশের যে জমি সারা বছরই অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতো সেই জমি এখন শিমের সবুজ সমারোহ সাদাবেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশে বেড়া দিয়ে গড়ে ওঠা শিমের মাচা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি নজর কাড়ছে পথচারীদের। অনেকে এখানে এসে সুন্দর এমন মনরম পরিবেশ দেখে ছবি তুলতেও ভুল করছেন না।
শিম চাষি গফ্ফার মোড়ল বলেন, রাস্তার পাশে যে শিম হবে এটা তিনি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কৃষি কর্মকর্তাদের পিড়াপিড়িতে ইচ্ছা না থাকলেও তিনি রাস্তার পাশে শিম চাষ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এখন ফলন ও ফসলের দাম পেয়ে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। আগামীতে আরও বেশি এলাকায় নিজ উদ্যেগে শিমের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক জয়দেব বিশ্বাস জানান, উঁচু জায়গা হওয়ায় মৌসুম শুরুর আগেই চারা রোপণ করেছিলেন। এতে সবার আগে বাজারে তার সিম আসে। উৎপাদনও নজর কাড়া। দামও ভালো। কম খরচে বেশি লাভ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কৃষক রাজ্জাক শেখ বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমি কোনো দিন কোনো কাজে ব্যবহার হয়নি। এবারই প্রথম শিম চাষ করে অনেক ভাল ফলন পেয়েছেন। উঁচু জায়গা হওয়ায় এবছর উপকূলে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর জলবদ্ধতাও এই শিম গাছের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান এই কৃষক।
কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমিতে শিমের এমন বাম্পার ফলন দেখে তার মত এলাকার অনেক কৃষক আগামী বছর এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে কৃষদের মাঝে বিনামূল্যে এই শিমের বিতরণ করা হয়। কিন্তু কৃষকরা রাস্তার পাশে শিম চাষ করতে আগ্রহী ছিল না। অনেকবার বুঝিয়ে তাদের শিম চাষ করানো হয়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাকা পড়ে না থাকে।’ এটি বাস্তবায়ন করতে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবার কৃষকদের বুঝিয়ে এই পদ্ধতিতে শিম চাষ করানো হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকদের এনে এই ভাবে শিম চাষ করার পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে। ফলন দেখে অন্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী হচ্ছে। রাস্তার পাশের পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে নিরাপদ সব্জি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যেমে চাষিদের সচেতন করতে পারলে ফকিরহাটের প্রতিটি সরকারি রাস্তার পাশে এইভাবে শিমের চাষ করা সম্ভব। এতে একদিকে পতিত জমির ব্যবহার হবে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ বিষমুক্ত সব্জি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম