সাগরকন্যা কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেন হাজার হাজার পর্যটক। অথচ ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেই গঙ্গামতি সৈকতের পরিবেশ দূষিত করার অভিযোগ উঠেছে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
জিরো পয়েন্টের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুই কিলোমিটার সৈকতেও নিয়মিত ময়লা আবর্জনা ফেলা অভিযোগ রয়েছে সৈকতের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। জোয়ারের সময় ওই ময়লা-আবর্জনা ভেসে যাচ্ছে সাগরের পানিতে। এতে দূষিত হচ্ছে সাগরের পানিও। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে গিয়ে দূষিত বায়ুর কারণে মুখ ফিরিয়ে নিলেও এ বিষয়ে নজর নেই সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের।
গঙ্গামতির স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন জানান, গঙ্গামতি লেক সংলগ্ন প্রায় অর্ধকিলোমিটার সৈকত জুরে সম্প্রতি ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু করে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন গাড়ি বোঝাই করে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলছে সৈকতে।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, কুয়াকাটা সৈকত এমনিতেই নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তার ওপর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলায় প্রতিনিয়ত সৈকতের বাতাস বিষাক্ত হচ্ছে। এতে পর্যটকদের নাকে রুমাল চেপে চলতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কুয়াকাটা সৈতক থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে আশংকা করেন তিনি।
কুয়াকাটা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রুমন ইমতিয়াজ তুষার বলেন, চলতি শীত মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছে কুয়াকাটায়। বনভোজনের বাস আসে শতাধিক। এসব পর্যটকরা সৈকতের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। এতে গোটা সৈকত অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্ত সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
রুমন ইমতিয়াজ তুষারের অভিযোগ, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি নামেই আছে, তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। কুয়াকাটা সৈকত নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে পৃথক ‘পরিচ্ছন্ন টিম’ গঠন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাশোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, সৈকত লাগোয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা এখনও পর্যটন বান্ধব হয়ে উঠতে পারেননি। তাই তারা জিরো পয়েন্টের পূর্ব-পশ্চিমে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলছেন। বেরিবাঁধের বাইরে আবাসিক ও খাবার হোটেলগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ওই সব হোটেলগুলোর বর্জ্য নেমে যায় সৈকতে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পর্যটকরাও বিরক্ত হন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, সমুদ্র সৈকতকে ঘিরেই কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করা হয়েছে। কিন্ত সৈকতের প্রাকৃতিক রূপ রক্ষা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নজর নেই। সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটিতেও সৈকত বান্ধব লোক নেই। তাই সৈকতের সুরক্ষায় ব্যবস্থাপনা কমিটিও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কুয়াকাটা পৌরসভাকে পর্যটন বান্ধব হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। সৈকতে দখল-দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পর্যটকরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনিও।
কুয়াকাটা পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক ও সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সুভাষ নন্দী বলেন, যে স্থানে পৌরসভা ময়লা ফেলছে সেই জায়গাটি পৌরসভা কিংবা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতাধীন নয়। ওই এলাকা ধুলাসার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। এ কারণে সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি বাধাও দিতে পারছে না। তবে জিরো পয়েন্টের দুই পাশের ব্যবসায়ীদের সৈকতে ময়লা না ফেলার জন্য বহুবার সতর্ক করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গঙ্গামতি এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলেছে বলে তিনি শুনেছেন। ভুলে এটা হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় নিরূপায় হয়ে ময়লা আবর্জনা বিভিন্ন স্থানে ফেলতে হয়।
পৌরসভার ৪জন পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা সৈকত পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব পালন করে উল্লেখ করে পুরো সৈকত পৌরসভার আওতায় আনার দাবি জানান পৌর মেয়র বারেক মোল্লা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন