নেত্রকোনার আধুনিক সদর হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রোগীদের একমাত্র ভরসা এখন নার্স। প্রতিদিন শুধুমাত্র সকালে রাউন্ড দেন একজন ডাক্তার। এরপর বাকি সময় নার্সরাই ভরসা। কোন মুমূর্ষু রোগী হলেও অপেক্ষা করতে হয় পরদিন সকালের জন্য।
জানা যায়, জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯২ সনে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই চিকিৎসক সংকটসহ নানা সংকটে দাঁড়িয়ে আছে শহরের জয়নগর এলাকায় নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালটি। এছাড়াও ঔষধ সংকট কিছুটা লাঘব হলেও খাবারে নিন্মমানের অভিযোগ এবং অপরিছন্ন পরিবেশ রয়েই গেছে।
সরেজমিনে টানা এক সপ্তাহ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বরে ১০০ শয্যায় উন্নীতের অনুমোদন পায় হাসপাতালটি। কিন্তু এখনো ৫০ শয্যার ডাক্তার পদেই ৫ টি পদ শূন্য রয়েছে। তার উপর ১০০ শয্যার জনবল তো স্বপ্নের মতো।
হাসপাতালের ইনডোরে ভর্তি রোগীদের প্রতিদিন শুধুমাত্র সকালে একজন ডাক্তার রাউন্ড দেন। বাকি সময় ডিউটি করেন দুজন করে নার্স (প্রতি শিফটে)। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন সিনিয়র নার্স দিবারাত্রি দ্বায়িত্ব পালন করেন। কোন রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ইমার্জেন্সির মেডিকেল অফিসারকে ডেকে আনতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইনডোর রোগীদের একমাত্র ভরসা নার্সরা। তাদের উপর ভর করেই প্রায় প্রতিদিন ১০০ শয্যার হাসপাতালে ১৮০ থেকে ২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। কখনো বা দুই শতাধিক রোগীও ভর্তি থাকেন। শিশু বিভাগেরতো ডাক্তারই নেই।
এদিকে আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে দেখতে হয় ইর্মাজেন্সি ডাক্তারদের। এর উপরে দীর্ঘদিন ধরে সনোলজিস্ট না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি বিকল পড়ে আছে। খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও পুরো হাসপাতাল এলাকায় ময়লা ফেলা বা থুথু ফেলার জন্য নেই কোন ডাস্টবিন। মেঝে এখন আগের চেয়ে কিছুটা পরিচ্ছন্ন থাকলেও থুতু এবং ময়লা ফেলে নোংরাই থাকে বেশিরভাগ। এসব সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে ইনডোর আউটডোর চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪৩ জন ডাক্তারের স্থলে মাত্র ১৭ জন কর্মরত আছেন। তার মধ্যে নয়জনই ধার করা। নেই শিশু বিশেষজ্ঞ। একজন সার্জারী এবং একজন মাত্র গাইনী বিশেষজ্ঞ। পরিচ্ছন্নতা কর্মী অপ্রতুল। মাত্র ৭ জন পদায়ন থাকলেও সেখানে একটি পদ শুন্য।
ডাক্তার ১৭ জনের মধ্যে ৫ জন ক্যাডার থাকলেও তারা একদম নতুন অনভিজ্ঞ। এর মাঝে নয়জন ধার করা বিভিন্ন উপজেলা থেকে। শুধুমাত্র নার্সদের ৬৫ টি পদের মধ্যে একটি মাত্র শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন তত্বাবধায়কের পদটিও শূন্য থাকার পর সম্প্রতি পূরণ হয়।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার এ এস এম মাহবুবুর রহমান এসকল সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, ডাক্তার সংকটের জন্যই ইনডোর রাউন্ড বাড়াতে পারছেন না। ইমারজেন্সিতেও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। ৪৩ জন ডাক্তারের জায়গায় মাত্র ১৭ জন।
তিনি বলেন, কাঙ্খিত সেবা চাইলেও দিতে পারছি না। এই ১৭ জনের মধ্যে ৫ জন ডাক্তার ক্যাডার হলেও একেবারে নতুন, তাই আমরা সেবাটা বাড়াতে পারছি না। তবে অচিরেই এই ৫ জনকে কাজে লাগিয়ে ইভনিংয়ে অন্তত একটা রাউন্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল