নেত্রকোনা জেলা শহরের শতবছর পুরনো এতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বর্তমান মোক্তারপাড়া সড়কে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টি। যে বিদ্যালয়ের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নানা ইতিহাস। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ঠিক কত সন থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা ভেন্যু শুরু হয় এটা কেউ নিশ্চিত হতে পারছেন না। তবে অনেকের ধারণা ব্রিটিশ আমল থেকেই পরীক্ষা ভেন্যু হিসেবে শুরু।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ছাত্র সংখ্যা বেশি পরিমাণ থাকলেও এ বছর হারালো পরীক্ষা কেন্দ্র। কেউ কেউ বলছেন, স্কুলের ম্যনেজিং কমিটি ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা তদন্তের ঘটনায় ঘটেছে এমনটি। আবার কেউ কেউ বলছেন, ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম স্থগিতাদেশের ঘটনায় জেলা মাধ্যমিক কর্মকতার স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলনসহ ফেসবুকে নানা সমস্যার কথা ভাইরাল হওয়ায় এমনটি হয়েছে। হারিয়েছে পুরনো ঐতিহ্য। আবার স্কুলের শিক্ষকরা দাবি করছেন, ঈর্ষান্বিত হয়েই এটি করা হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্র সূত্র জানায়, প্রতিবছর জেলা সদরে একটি কেন্দ্র ও চারটি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম চলতো। এ বছর সদর উপজেলার মোট ২২টি স্কুল নিয়ে দুটি কেন্দ্র করে মোট ৫ টি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারমধ্যে মূল কেন্দ্র আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১ টি স্কুলের তিনটি ভেন্যুতে ১৫২৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। অন্যদিকে, নতুন হওয়া চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুইটি ভেন্যুতে ১১ টি স্কুলের এক দুই সাবজেক্টসহ আংশিক মিলে ৬২০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষার্থী মাত্র ৩৫ জন এবং দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ৫৬৭ জন। দত্ত স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও সকল স্কুল ছাড়িয়ে ২৮০০।
এ ব্যাপারে দত্ত স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, চন্দ্রনাথ স্কুলে এমন বছরও গিয়েছে কোনো শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাশই করেনি। ছাত্র সংখ্যা শতেকখানি হয় কিনা সন্দেহ আছে। চন্দ্রনাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ার পর এ বছর স্কুলটিকে কেন্দ্র এবং ভেন্যু করা হয়েছে। পরীক্ষার পূর্বে কেন্দ্র ভেন্যু নির্ধারণী সভায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দত্ত স্কুলটিতে আসতে শিক্ষার্থীদের মেছুয়া বাজারে জ্যামে পড়তে হয় কারণ দেখিয়ে আদর্শ বালিকায় ভেন্যু দাবি করনে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসন পড়েছে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় পার হয়ে এক মাথায় আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এর প্রেক্ষিতে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজল খান বলেন, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তাকে হল সুপার করায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সিট পড়েছে আঞ্জুমান স্কুলে।
এদিকে, দত্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০/১১/১৯ তারিখে ময়মনসিংহ বোর্ড থেকে ম্যনেজিং কমিটির নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ আসে। ডিসেম্বর মাসের শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন হয় জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার স্বাক্ষরে। পরবর্তীতে ২৬/১২/১৯ তারিখে কয়েকটি তিনটি শর্ত উল্লেক করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারপত্র আসে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এবিএম শাহজাহান কবীর জানান, নেত্রকোনা জেলা শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এটি। এটি সিসি ক্যামেরায় অর্ন্তভুক্ত থাকায় পরীক্ষার পরিবেশ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল থাকে। যা শহরতলীর বিভিন্ন স্কুলের পছন্দ নয়। জেলা প্রশাসক সভায় দত্ত এবং আদর্শ বালিকার নাম প্রস্তাব দিলেও যানজটের কারণ দেখিয়েছে দুটি শহরতলীর স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রেখেই প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু সেই সকল শিক্ষার্থীরা সেই যানজট অতিক্রম করে একেবারে শহরের শেষ মাথায় গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাহলে অবশেষে হলোটা কি?
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন