ভাঙ্গায় গত এক বছরে বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে সংঘর্ষে ভাঙ্গায় ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। ছোট বিষয় নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হচ্ছে। পরিণতিতে খুন, জখম, বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের মাধ্যমে সমাপ্তি হচ্ছে।
ভাঙ্গা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে মানিকদহ, নুরুল্লাগঞ্জ, হামিরদী, তুজারপুর, ঘারুয়া ইউনিয়ন ও ভাঙ্গা পৌরসভার কমপক্ষে ১৫টি গ্রামে বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। হামিরদী ইউনিয়নের মাধবপুর, গজারিয়া, মুনসুরাবাদ, খাপুরা গ্রামে গত দুবছর যাবত বার বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে গ্রামবাসী। ঘারুয়া ইউনিয়নের রাজেশ্বরদী ও হাজরাকান্দা গ্রামেও গত কয়েকবছর যাবৎ দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ভাঙ্গা পৌরসভার হাজরাহাটি, গজারিয়া, নওপাড়া মহল্লায় গত দু বছরে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ ও বাড়ি ঘর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
২০২০ সালের ২৪ আগষ্ট বিলের পানিতে জাল পেতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের হাবিলি গংগাধরদী গ্রামের গিয়াসউদ্দিন মাতুব্বরের দুই ছেলে শামিম মাতুব্বর (২৭) ও রাকিব মাতুব্বর (১৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। গত ১৮ এপ্রিল ভাঙ্গার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে চাচা ইউসুফ শেখ (৫০) কে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে আপন ভাতিজা জয়নাল শেখ। গত ২১ এপ্রিল মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শহীদ মাতুব্বর (৩৬) নামক এক ব্যক্তি খুন হন। ৩১ ডিসেম্বর ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের কালামৃধা গ্রামে চাচাতো ভাই এর লাঠির আঘাতে মারা যায় লাল মিয়া হাওলাদার (৫৫)।
গত ১৩ এপ্রিল ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আলেখারকান্দা গ্রামে সরকারি জমিতে ঘর তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে দুই উপজেলার তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোক। ২ এপ্রিল হামিরদী ইউনিয়নের মাধরপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে ভোররাতে ১৫টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে।
১৭ এপ্রিল হামিরদী ইউনিয়নের ভীমেরকান্দা গ্রামে ছাগলে পাট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
১১ মে ঘারুয়া ইউনিয়নের রাজেশ্বরদী গ্রামে কুমার নদে গোসল করার সময় মেয়েদের পানি ছিটানো নিয়ে পাশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১ জুলাই হামিরদী ইউনিয়নের খাপুরা গ্রামে গাছ থেকে নারকেল পাড়া নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান সফিউদ্দিন মোল্লা বলেন, ভাঙ্গার অধিকাংশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে।
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুধিন কুমার সরকার বলেন, ভাঙ্গার অনেক গ্রামেই আধিপত্যবিস্তার নিয়ে দুটি গ্রাম্য দল রয়েছে। ঠুনকো বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সমাপ্তি হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিহিংসা, হিংসা থেকেই সংঘর্ষ হয়। এটি পরবর্তীতে বংশ পরস্পরাও চর্চা হয়।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, নতুন বছরে ভাঙ্গায় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিক ভাবে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল