তীব্র শীতে হিমালয়ের নিকটবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত দুই দিন থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। পরিবারগুলোতে শীতের পোশাক না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা করে চলছে শীতার্ত দুস্থ মানুষ।
সোমবারের ন্যায় মঙ্গলবার সারাদিনেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলা পাড়ের শিশু, বৃদ্ধ সকলেই। তিস্তা-ধরলা পাড়ের মানুষ জন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার লালমনিরহাটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সুবল চন্দ্র রায়।
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা ও সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে দিনে ও রাতে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠান্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায় গ্রামাঞ্চলের শীতবস্ত্রহীন মানুষ তাকিয়ে থাকছেন সূর্যের আলোর দিকে। সারাদিন ঠান্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারেও লোকসমাগম অনেকটাই কম।
তিস্তা পাড়ের রুদ্রেশ্বর গ্রামের আফাজ আলী জানান, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। তিস্তা পাড়ে প্রচুর শীত। এই এলাকায় বেশি ভাগ মানুষ দিনমজুর ও জেলে। ঠান্ডায় কাজ কর্ম না পেয়ে এই শীতের মৌসুমে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়।
হাতীবান্ধার উপজেলার ফকিরপাড়ার রিকশা অনীল চন্দ্র বলেন, ঠান্ডা আর কুয়াশার জন্য সকাল থেকে রিকশা বের করার সাহস পাইনি। শীতে যাত্রীও পাওয়া যায় না। বিকেল ৩টা, এখন পর্যন্ত কোনো ভাড়া পাইনি।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দিনমজুর সবুর আলী বলেন, এই ঠান্ডার মধ্যে কাজকাম করতে পাই না। আমি গরিব মানুষ। পরিষদে কম্বল আসে, সবাই পায় আমি পাই না। শুধু হাতের ওপর সংসার আমার।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দুর্গম। এখানে প্রায় ১২টি চর রয়েছে। এসব চরে বসবাসকারী শীতার্ত মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বলতে ৩২৫টি কম্বল পেয়েছি। তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, দহগ্রাম ইউনিয়নের পাশেই হিমালয়। তাই এই এলাকায় প্রচুর শীত আর কনকনে ঠান্ডা। দুই দফায় ২৯০টি কম্বল আমার ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে পেয়েছি। তিস্তার পাড়ের শীতার্তদের মাঝে তা বিতরণ করেছি।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। উপজেলা মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত দুই দিনে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৩ জন শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, লালমনিরহাটের শীতার্তদের জন্য প্রায় ২৯ হাজার ৮ শত কম্বল ও ৩৭ লাখ টাকা, ৫ উপজেলার জন্য শুকনা খাবার পেয়ে তা বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান আছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই