বগুড়ার নন্দীগ্রামে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম রণবাঘা হাট-বাজার কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইজারা বাতিলের দাবিতে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গত দু’দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি আহবান করেছেন তারা।
সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে ইজারা বাতিলের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন চন্দ্র, মুকুল হোসেন, শামীম শেখ, সরফুল হক উজ্জল, শাজাহান আলী, আব্দুর রাজ্জাক, রাকিবুল হাসান, আবু নোমান, আনন্দ কুমার, কৃষকলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাঈদ রায়হান, শ্রমিক লীগের আহবায়ক এনামুল হক, যুগ্ম-আহবায়ক সানোয়ার হোসেন মিলন, উপজেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সবুজ, যুবলীগ নেতা এমআর জামান রাশেল, আকতার হোসেন, মোফাজ্জল বারী, পৌর স্বেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ, ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের রণবাঘা হাটটি উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম হাট। প্রতি বছর এ হাট থেকে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১৪২৮ সনের ইজারার জন্য পত্রিকায় দরপত্র আহবান করা হয়। সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৫ টাকা। সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ ছিল গত ২৮ এপ্রিল।
পঞ্চম ধাপে দরপত্র গ্রহণের শেষ দিন গত ২৯ এপ্রিল মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার দরপত্র দাখিল করে। যা সরকারি মূল্যের চেয়ে ৩২ লাখ ২৯ হাজার ২৬৫ টাকা কম। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। গত ১৪২৭ সনে রণবাঘা হাট ইজারা দেয়া হয় এক কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকায়। বক্তারা বলেন, মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এর মালিক বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন।
তবে সিডিউলে মালিকের জায়গায় কৌশলে আব্দুল করিম উল্লেখ করা হয়েছে। হাট ইজারা প্রদানের ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়নি। তাই রণবাঘা হাটের ইজারা বাতিল করা না হলে মঙ্গলবার ইউএনও অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এতেও কাজ না হলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, সরকারি হাট-বাজার ইজারা নীতিমালার ২-এর ১০ উপধারা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে পরিষদের সাধারণ বা বিশেষ সভার কার্যবিবরণীসহ মতামত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। হাট ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে পরিষদকে অবহিত করা হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেনকে সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক কমে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইজারাদারের নাম জালিয়াতি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা হাট-বাজার কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত জানান, হাট ইজারার জন্য দরপত্র ক্রয় ও দাখিলের পাঁচটি আলাদা তারিখ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম চার দফায় কেউ ডাকে অংশ নেননি। পঞ্চম দফায় একজন ইজারাদার ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ডাক দেন। সরকার মূল্যের চেয়ে কম হলেও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নীতিমালা অনুসারে জেলা প্রশাসক তাকে ইজারা দিয়েছেন। আর ইজারা গ্রহীতা যে দর দিয়েছেন তা ৩৬৫ দিন খাস আদায়ের চেয়েও বেশি। তবে দরটি ভ্যাটসহ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। হাট ইজারা প্রদানে কোন অনিয়ম হয়নি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাসদের সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন বলেছেন, হাট-বাজার ইজারা নিতে ঠিকাদারি লাইসেন্স লাগে না। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ হাটটি ইজারা পেয়েছে। রাহী এন্টারপ্রাইজ, প্রোপাইটার আব্দুল করিম আমার প্রতিষ্ঠান। স্বল্প দরে ইজারা নিতে ও সরকারি মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি অযৌক্তিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন