ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আসন্ন নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৫) ও তার সহযোগী বাদল সরকারকে (২৫) গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। রবিবার নিহত এরশাদুল হকের ছোট ভাই আকতারুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জনসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে নজরুল ইসলামকে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থীও রয়েছেন। তারা হলেন সজীব চৌধুরী (শামীম আব্দুল্লাহ) ও রফিকুল ইসলাম রতন। দুজনই নাটঘর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন। নিহত এরশাদুলও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত এরশাদুল হক নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে ও নাটঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাবার অসুস্থতার কারণে তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বাবার বদলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
এদিকে, সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক ও তার সহযোগী নান্দুরা গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে বাদল সরকার খুন হওয়ার পর থেকে এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আকস্মিক এই কিলিং মিশন এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এতে গ্রামে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ার পাশাপাশি নাটঘর বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। আচমকা কমে গেছে মোটরসাইকেলের চলাচল। অনেকটা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে এলাকাবাসী।
এছাড়াও পরিকল্পিত জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যাপক কৌতূহল বিরাজ করছে সর্বত্র। কেন এই জোড়া খুন, কারা এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়। তাদের কাছে কোথা থেকে এলো এত আগ্নেয়াস্ত্র। যা দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়। এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।
একাধিক সূত্র জানায়, সুপরিকল্পিত এই কিলিং মিশনে অন্তত ১৬/২০ জন অংশ নেয়। ৬/৭টি মোটরসাইকেলে ভাড়া করা কিলাররা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে উল্লাস করতে করেত চলে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুটি কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। একটি হলো ২০১৯ সালের জুলাই মাসে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে হত্যা করা হয় এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফউল্লাহকে। এ ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ২০ জনকে আসামি করে নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। পলাতক আসামিদের কয়েকজন সম্প্রতি বাড়ি এলে তাদের আটক করে পুলিশ। পূর্বের এই বিরোধের জেরে এরশাদুল ও তার সহযোগী বাদল খুনের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার।
অপর দিকে স্থানীয়রা মনে করছেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণেও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল খুন হয়ে থাকতে পারেন। তাদের মতে, এরশাদুল অনেক জনপ্রিয় ও মিশুক হওয়ায় তার প্রতি জনগনের ব্যাপক সমর্থন ছিল। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। মাঠে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই