চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় খুব শিগগিরই যোগ হচ্ছে কম বয়সী এক জোড়া সিংহ-সিংহী। এগুলো আনা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। একই সঙ্গে আনা হবে আটটি বন্যপ্রাণী।
আগামী মাসেই এগুলো আসার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি যোগ করা হয়েছে ক্যাঙারু, লামা এবং ম্যাকাও পাখি। এসব পশু ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের একমাত্র চিড়িয়াখানা। বিনোদনের এই আঙিনায় যোগ হচ্ছে নানা অনুষঙ্গ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চিড়িয়াখানায় বর্তমানে আছে ১৬টি বাঘ। এর মধ্যে ৫টি সাদা বাঘ।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নোভা নামের একটি সিংহী আছে। তার সঙ্গী বাদশাহ গত দুই মাস আগে মারা যায়। তাছাড়া নোভাও এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত। তাই গত এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া সিংহ-সিংহী চেয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো সাড়া মিলেনি। দেশে খোঁজ না পাওয়ায় বাদশা-নোভার উত্তরসূরি পেতে খোঁজ করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে মিলেছে উত্তরসূরি। আগামী মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুই বছরের কম বয়সী এক জোড়া সিংহ আসবে। চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এক জোড়া সিংহসহ পাঁচ প্রজাতির প্রাণী আনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও এখন শেষ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর (ভারপ্রাপ্ত) শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চিড়িয়াখানায় সিংহ মারা যায় এবং সিংহীও বয়সের ভারে কাবু। তাই নতুন করে এক জোড়া সিংহ-সিংহী আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর সঙ্গে আসবে আটটি ওয়াইল্ড বিস্ট। আগামী মাসেই এগুলো আসার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি যোগ করা হয়েছে ক্যাঙারু, লামা এবং ম্যাকাও পাখি। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে চিড়িয়াখানাকে পশু-পাখি দিয়ে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে সিংহ বাদশাকে চট্টগ্রামে এবং চট্টগ্রামের শোভাকে রংপুর পাঠানো হয়। তখন বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে নোভা-বাদশা’র বিয়ে দেয়া হয়। ভাববিনিময়ের ১০দিন পর তাদের এক খাঁচায় দেয়া হয়। তবে তাদের কোনো উত্তরসূরি হয়নি। এখন নতুন জুটি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠা হয়। তবে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিনের উদ্যোগে টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে আমূল পরিবর্তন হয় চিড়িয়াখানার। বর্তমানে এখানে ৭০ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি আছে। এর মধ্যে বাঘ, সিংহ, কুমির, জেব্রা, ময়ূর, ভালুক, উটপাখি, ইমু, হরিণ, বানর, গয়াল, অজগর, শিয়াল, সজারু, বিভিন্ন জাতের পাখি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আছে ৫টি বিরল সাদা বাঘসহ ১৬টি বাঘ ও ৬টি জেব্রা। নির্মাণ করা হয় নান্দনিক সিড়ি, পুরাতন খাঁচাগুলো ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে নতুন খাঁচা। কুমিরের খাঁচা সম্প্রসারণ করে করা হয় দ্বিগুণ। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রধান ফটক। বাড়ানো হয়েছে পশু পাখির সংখ্যা। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে ৩২ হাজার ১৬৪ বর্গফুট আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা। পুরো চিড়িয়াখানা এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিস্তৃত পরিসরের কিডস জোন। দর্শনার্থীদের জন্য বানানো হয়েছে নান্দনিক রূপের বসার স্থান এবং পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। চিড়িয়াখানার তাপমাত্রা সঠিক রাখতে লাগানো হয়েছে হাজারেরও বেশি ফলদ ও ফলজ বৃক্ষ। প্রাণিখাদ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা স্টোর রুম, কোয়ারেন্টাইন রুম এবং অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক প্রাণি হাসপাতাল। দর্শনার্থী ফি দিয়ে চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাদ্য যোগান ও নতুন প্রাণী সংগ্রহ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল