বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ দুই জেলার মধ্যে রেলপথ সংযোগের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। আগামী মাসে শুরু হচ্ছে রেলপথের উভয় পাশের জমি অধিগ্রহণ। নকশা প্রণয়ন শেষ করে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে রবিবার সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলসড়কটি নির্মাণ হলে ঢাকার সাথে ১১২ কিলোমিটার পথ কমে যাওয়ার সঙ্গে সময় বেঁচে যাবে প্রায় ৪ ঘণ্টা।
রবিবার সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক, রেলকর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করায় ট্রেনগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু পার হয়ে সারা দেশের সঙ্গে চলাচল করবে। এসব স্টেশনের বাইরে বগুড়ার কাহালুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে রেলপথের। বর্তমানে বগুড়া থেকে ট্রেনে সিরাজগঞ্জ যেতে সান্তাহার জংশন, নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরতে হয়। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে দূরত্ব কমে যাবে প্রায ১২২ কিলোমিটার।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ। ইতিমধ্যে জমি অধীগ্রহণের যে সব কার্যক্রম রয়েছে তা শুরু হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েই মূলত প্রকল্প পরিচালকের সাথে আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে উত্তরঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য আরো প্রসার হবে। সময়, খরচ ও দূরত্ব কমে গিয়ে কম সময়ের মধ্যে মানুষ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মতে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। বগুড়ার উন্নয়নে কোন কমতি থাকবে না। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে সকল প্রকার কাজ করা হবে। এই কাজ শেষ হলে বগুড়ার উন্নয়ন দ্রুত হবে।
প্রকল্প কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)-এর যৌথ অর্থায়নে এই রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালে নির্মাণকাজ শেষ হবে। এই রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও তা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় বাড়তে পারে। দুই জেলায় মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া অংশে প্রায় ৫০০ একর ও সিরাজগঞ্জ অংশে ৪৬০ একর।
জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। নকশা তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বগুড়া রেললাইন থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানিরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নির্মাণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল