জুলাই-আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানে ৪-৫ আগস্ট ফেনীর মহিপাল ও ট্রাংক রোডে আওয়ামী লীগের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হয় ১৩ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে ফেনী শিল্পকলা একাডেমিতে স্মরণসভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
এসময় জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফেনীর ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে বক্তব্য রাখেন তাদের স্বজনরা। এছাড়া গুরুতর আহত শিক্ষার্থীরাও গণ-অভ্যুত্থানের নানান স্মৃতিবিজড়িত বক্তব্য রেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।
ফেনীর ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ৪ঠা আগস্ট মহিপালে ছাত্রলীগের ছোঁড়া গুলিতে প্রথম নিহত হওয়া ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের বাবা নিসার আহম্মদ বলেন, 'ছেলেকে ধরে রাখতে পারিনি, অধিকার লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ শরীরে ছেলে রাজপথে নেমে গিয়েছিল। সেদিন দুপুর ২টায় খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে, ছেলের রক্তাক্ত শরীরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম সেদিন। হায়েনারা আমার ছেলে শ্রাবণকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি তার লাশ দ্রুত দাফনের জন্য আমাকে বাধ্য করেছিল।' এসময় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সমন্বয়দের ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার কথা জানান তিনি।
নিহত মাহবুবুর হাসান মাসুদের ভাই মন্জুরুল হাসান বলেন, '৪ তারিখ মহিপালে আমার ভাই শেষ নামাজ পড়েছিল। বুলেটে রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিল আমার মাসুদের নিথর দেহ।' এসময় তার ভাইয়ের নামে সোনাগাজীর জিরো পয়েন্ট নামকরণ করে দ্রুত আসামিদের বিচারের দাবি জানায় তিনি।
৫ই আগস্ট ফেনীর ট্রাংক রোডে বিজয় মিছিলের আওয়ামী লীগের গুলিতে চোখ হারায় রামপুরের নাহিদুর রহমান। সরকার পতনের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার কথা জানায় তিনি। সেদিন ৪৫ টা স্প্রিন্টার বুলেটে শরীর ক্ষতবিক্ষত হলেও ১ টি স্প্রিন্টার নষ্ট করে দেয় তার চোখের রেটিনা। দেশের বাহিরে চিকিৎসা ব্যবস্থা করার দাবি জানায় নাহিদ।
১১ টি বুলেটে শরীর থেকে অপসারণ হলেও মাথায় থাকা ১টি বুলেট নিয়ে এখনো কষ্টে দিন অতিবাহিত করা ছাত্র আন্দোলনে আহত আবু জাফর ইকবাল বলেন, 'আমার এত ভাই জীবন দিয়েছে, নতুন সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু আমরা তো ভালো নেই। চিকিৎসার অভাবে হয়তো আমরা মারা যাবো।' এসময় আহতদের সঠিক তালিকা করে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানান তিনি।
এসময় নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের বিভিন্ন দাবির কথা শুনে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সকল দাবি পূরণ ও চিকিৎসার দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনী-পুলিশ-আনাসারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, ছাত্র প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।
বিডি প্রতিদিন/এমএস