জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জসিম হাওলাদারের কন্যা লামিয়া আক্তারকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। পটুয়াখালীর আলোচিত এই ঘটনায় গত বুধবার দুমকি থানার ওসি তদন্ত ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম পটুয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। প্রতিক্রিয়া জানতে মা মোসা. রুমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাদীর মা রুমা বেগমের বরাত দিয়ে দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, অভিযোগপত্রে বাদীর মা খুবই সন্তুষ্ট। এখন তার একটাই চাওয়া আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, জুলাই আন্দোলনে শহীদ পিতা জসিম হাওলাদারের কবর জিয়ারত করে নানাবাড়ি পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানী গ্রামে যাওয়ার পথে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকি উপজেলার একই ইউনিয়নের রাজগঞ্জ গ্রামের কলেজছাত্রী লামিয়া আক্তার (১৭) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে দুই জনকে আসামি করে দুমকি থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে এজাহারভুক্ত শাকিব মুন্সি ও সিফাত মুন্সি নামের দুই কিশোরকে আইনের আওতায় এনে যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্ত চলাকালে গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. জাকির হোসেন আরও বলেন, বাদী লামিয়া আক্তার শাকিব মুন্সি ও সিফাত মুন্সির নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকালে এ ঘটনায় ইমরান মুন্সির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাই তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ২২ মার্চ এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ২৭ মার্চ আদালত এক আসামিকে যশোর শিশু সংশোধনাগারে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরেক জনের জড়িত থাকার কথা জানায়।
ওসি বলেন, তদন্তকালীন ইমরান মুন্সির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার পর তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আত্মগোপনে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
ওসি আরও বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালে গত ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার শেখেরটেক এলাকায় বাদী আত্মহত্যা করেন। তাই মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জসিম হাওলাদার। গত ১৮ই মার্চ সন্ধ্যার পর লামিয়া তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হন। পরে লামিয়া বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে দুমকি থানায় মামলা দায়ের করেন। দুমকি থানা পুলিশ আসামি শাকিব ও সিফাতকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। তারা কারাগারে রয়েছে। ২৬ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকে ৬নং রোডে ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁসরত ঝুলন্ত অবস্থায় লামিয়া আক্তারকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রামের বাড়িতে বাবার কবরের পাশেই লামিয়া আক্তারকে দাফন করা হয়।
মেয়ের দাফনের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ায় রাতেই তার মা মোসা. রুমা বেগমকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে তার মায়ের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মোসা. রুমা বেগমের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় পেশাদার কাউন্সেলিং নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ৫ মে পটুয়াখালীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ইউসুফ হোসেন এ মানবিক আদেশ প্রদান করেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল