কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরী (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। এরপর এ ঘটনায় চকরিয়া থানা পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এএসআই মোহাম্মদ হানিফ মিয়া, কনস্টেবল মহিউদ্দিন ও ইশরাক হোসেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর কয়েকশো মানুষ বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে চকরিয়া থানা সেন্টারে মানববন্ধনে অংশ নেন। একপর্যায়ে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবরোধ করেন। দুর্জয় চৌধুরীর মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে তদন্তের পাশাপাশি জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
নিহতের বাবা কমল চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুর্জয়কে থানায় দেওয়া হয়। গত ১০–১২ দিন ধরে এই অভিযোগে তাকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছিল। এতে সে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। বৃহস্পতিবারও বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে একটি কক্ষে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়, এরপর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম বলেন, দুর্জয় চেক জালিয়াতি করে এবং নগদ ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ করার সময় দুর্জয় আমার সঙ্গেই ছিলেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে হাজতে রাখে। শুক্রবার সকালে শুনি তিনি আত্মহত্যা করেছেন—এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিত দাস জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়ের করা এক মামলার ভিত্তিতে দুর্জয়কে আটক করা হয়। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাকে থানায় সোপর্দ করেন। মামলায় ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাকে থানার হাজতে নেয়।
তিনি আরও জানান, আত্মহত্যার দৃশ্য সিসিটিভিতে সরাসরি না ধরা পড়লেও, হাজতের ভেতরে দুর্জয়ের চলাফেরা ও কার্যকলাপ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এদিকে, ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চকরিয়া থানা হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। তদন্ত কমিটি ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে চকরিয়া থানা হাজতের ভেতর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দুর্জয় চৌধুরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া এলাকার বাসিন্দা কমল চৌধুরীর ছেলে এবং চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম