টুটুন আর টুম্বা ভূত দুই বন্ধু। তাদের বন্ধুত্ব ভালোই চলছিল। এতদিনে টুম্বা ভূত অনেক কিছু শিখেছে। অনেক বাংলা ভাষা শিখে ফেলেছে। টুটুনও ভূতদের অনেক কিছু জেনেছে। এক দিন টুটুনের খুব জানতে ইচ্ছে হলো, তাদের নাম ভূত হলো কেন। টুম্বা ভূত টুটুনকে বলল, ‘শোনো বন্ধু, আমরা দেখা না দিলে আমাদের কেউ দেখতে পায় না। ভূতরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে খুব মজা পায়। আর ভয় থেকেই নাম হয়েছে ভূত। তোমাদের মতো আমাদেরও স্কুল আছে। সেই স্কুলে বছরে একবার করে পরীক্ষা হয়। যে যত বেশি মানুষকে ভয় দেখাতে পারে, সে তত বেশি নম্বর পায়। আমি আগামী বছর স্কুলে ভর্তি হব।’
টুটুনের ভূতবন্ধুর স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা শুনে তারও খুব ভালো লাগে। কিন্তু পরীক্ষার বিষয়টা জেনে মনে মনে ভয় পায় সে। টুটুনের মুখের দিকে তাকিয়ে টুম্বা ভূত সব বুঝতে পারে। টুটুনকে বলে, ‘আরে তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি তো আমার বন্ধু। আমি আমার দাদাভূতকে তোমার কথা আগেই বলেছি। দাদাভূত সবার সর্দার। তাকে সবাই খুব মানে। সে সবাইকে তোমার বিষয়ে বলে দিয়েছে। কেউ তোমাকে ভয় দেখাবে না।’
টুম্বা ভূত ক’দিন ধরে টুটুনের কাছে আসে না। ভূতবন্ধুর সঙ্গে ক’দিন কথা না হওয়ায় টুটুনের মনটা খারাপ। মন খারাপের কথা সে কাউকে বলে না।
কিছুদিন পর। টুটুনের খুব করে টুম্বা ভূতের কথা মনে পড়ছিল। ঠিক সেদিনই সন্ধ্যায় টুম্বা ভূত টুটুনের সঙ্গে দেখা করতে আসে। টুম্বা ভূতের আগমনে টুটুনের মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু টুম্বা ভূত টুটুনকে যা বলে, তাতে টুটুন রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। অনেক কষ্টও পায় সে। টুটুন জানতে পারে- কয়েকদিনের মধ্যে বাবুদের কালিবাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। পুরনো বটগাছটাও কেটে ফেলা হবে। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ভূত-পরিবারের সবাই খুব উদ্বিগ্ন। তারা আর এখানে থাকতে পারবে না। হাজার হাজার মাইল দূরে চলে যাবে। নতুন ঠিকানা খুঁজতে এ-ক’দিন দাদাভূতের সঙ্গে টুম্বা ভূতও ছিল। তাই এতদিন তার আসা হয়নি। তবে আজই টুটুনের সঙ্গে তার শেষ দেখা। আগামীকাল তারা নতুন ঠিকানায় চলে যাবে। একথা শুনে টুটুনের মন আরও খারাপ হয়ে যায়। টুম্বা ভূত টুটুনকে বলে, ‘মন খারাপ কর না বন্ধু। আমাদের বন্ধুত্ব কোনো দিন শেষ হবে না। তোমার কথা আমার সবসময় মনে থাকবে।’ যাওয়ার সময় টুটুনকে উপহার হিসেবে একটা ম্যাজিক কলম দিয়ে যায়। সেই কলম দিয়ে টুটুন ইচ্ছেমতো ছবি আঁকতে পারবে। মনে মনে ভেবে ম্যাজিক কলম কাগজে রাখলেই ছবি এঁকে দেবে। টুটুনের ভূতবন্ধু বলে, যখন তার কথা মনে পড়বে তখন টুটুন যেন ম্যাজিক কলম দেখে। সেই সঙ্গে একটা বটগাছের চারা দিয়ে যায়। এ বটগাছ যখন অনেক বড় হবে, তখন হয়ত অন্য কোনো ভূত-পরিবার এই গাছে এসে আবাস গড়ে তুলবে- এই বলে টুম্বা ভূত তার মানুষবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নেয়। এদিকে টুটুন তার দাদার কাছে টুম্বা ভূতের সব কথা বলে। দাদা বলেন, ‘দাদু ভাই কি আর বলব! এভাবে প্রতিনিয়ত আমরা গাছ কেটে সবুজ উজাড় করে ফেলছি। আমাদের উচিত- একটা গাছ কাটলে দুইটা গাছ লাগানো। কারণ, গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই, সেই অক্সিজেন নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি।’ দাদার কথায় টুটুন বুঝতে পারে, গাছ আমাদের অনেক ভালো এবং উপকারী বন্ধু।
টুটুন দাদার সঙ্গে ভূতবন্ধুর দেওয়া গাছ লাগায়। প্রতিদিন গাছে পানি দেয়, গাছের পরিচর্যা করে। টুটুন যখনই গাছের কাছে যায়, তখনই ভূতবন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়।