আগামী বছরের ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল’ টাইমফ্রেম ধরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
গতকাল বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ বা সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি। পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘উড়ে এসে জুড়ে বসিনি।’ সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে বলে তাঁকে অবহিত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটের প্রস্তুতি ফুল গিয়ারে চলছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সাক্ষাতের কারণে অনেকেই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করুক, না হয় সিইসি পদত্যাগ করুক। প্রধান উপদেষ্টাও নিরপেক্ষ, আমিও নিরপেক্ষ। উনি একজন প্রধান উপদেষ্টা। এ মুহূর্তে নির্বাচনটা হচ্ছে আলোচনার কেন্দ্রে। আমি হলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সৌজন্য সাক্ষাৎকারে সাইড টক হিসেবে কিছু তো আসে। এজেন্ডা নিয়ে আমি কোনো আলোচনায় যাইনি। কথা প্রসঙ্গে নির্বাচন তো আসেই। এটাই স্বাভাবিক। উনি যেটা জানতে চেয়েছেন-প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চান। আমাদের প্রস্তুতি আছে কি না? আমরা বলেছি, প্রস্তুতি ফুল গিয়ারে নিচ্ছি। আমি শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। হাসপাতালে ছিলাম।’
সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ওটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ এবং শিডিউল যথাসময়ে জানতে পারবেন। এমনকি নির্বাচন কমিশন থেকেই জানতে পারবেন। এটা জানতে আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে হবে না। সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি উনি (প্রধান উপদেষ্টা) অত্যন্ত আন্তরিক। একটা ডেমোক্র্যাটিক ট্রানজিশন যাতে হয়। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয় সেটাই চান প্রধান উপদেষ্টা। এখানে উনার সঙ্গে আমাদের মত মিলে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা এখন একই জায়গায় আছি। উনি কোনো দলের জন্য কাজ করার জন্য কোনো দিন বলেননি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে।’ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দাবি রয়েছে কোনো কোনো দলের। সেই বিতর্ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি সাফ জানিয়ে দেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কিছু বলছেন না। তিনি জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলে যাচ্ছেন। আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের টাইমফ্রেম সামনে রেখেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি; যাতে সরকার যখনই নির্বাচন করতে চায়, আমরা যেন নির্বাচন করতে পারি।’
২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করেন সিইসি নাসির উদ্দিন। অন্যদিকে ১৫ জুন লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। এর দুই দিন পর এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিইসি বলেছিলেন, যৌথ ঘোষণায় কারও ‘সই’ নেই, ফলে সেটাকে তিনি ‘সরকারি’ ঘোষণা বলতে পারছেন না। সরকারের তরফে তাঁকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানোও হয়নি। লন্ডনের ওই বৈঠকের ১১ দিনের মাথায় ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সিইসির। ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন আবেদন জমা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। ওই দিন এনসিপি বলেছে, ইসির পুনর্গঠন হবেই। আমরা ‘বি’ অপশনে যাচ্ছি না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। উনারা রাজনৈতিক দল। নানান ধরনের বক্তব্য দিতে পারে। রাজনৈতিক দল তো কত রকমের কথাই বলে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কি জোর করে এ চেয়ারে বসে গেছি? একটা নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেছি। উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। আমরা তো আগস্ট বিপ্লবের পরের ফসল।’ রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁর আস্থা আছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘সেখানে যে কথা হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। লন্ডনে ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে, আবার এপ্রিলের কথাও এসেছে। আমরা ওই টাইমফ্রেম সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ কবে নির্বাচন হবে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথমে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন ২০২৬ সালের প্রথম দিকে ভোট হবে। সংবাদে দেখলাম, মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন আগামী বছরের প্রথম দিকে সংসদ ভোট হবে। আমরা এ টাইমফ্রেম সামনে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’ কোন মাসে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে-জানতে চাইলে বলেন, ‘নির্বাচন যখন হয়, তার দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হয়।’