‘মেধা যার মেধা যার, চাকরি তার চাকরি তার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘একাত্তরের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২ জুলাই এসব স্লোগানে উত্তাল ছিল দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্পাসগুলোতে পালিত হয় পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা কর্মসূচি। দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন শাহবাগ। এতে কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সড়ক যোগাযোগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাবি গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয় ঢাবি শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা। নীলক্ষেত, নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড হয়ে ৪টার দিকে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করার পর পৌনে ৫টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেন। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, দাবি আদায়ে পরদিন ৩ জুলাই আবারও ঢাবি গ্রন্থাগারের সামনে পালন করা হবে অবস্থান কর্মসূচি। দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই ব্যানারে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালনের পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। একসময় বেগম রোকেয়া অ্যাভিনিউয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। শেকৃবি শিক্ষার্থীরা বলেন, এটা কোনো ব্যক্তিগত আন্দোলন নয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর আন্দোলন। দেশে যে মেধাগুলো আছে সেই মেধাগুলো যদি কাজে না লাগানো যায়, অযোগ্য লোক যদি দেশের যোগ্য স্থানে চলে যায়, তাহলে গোটা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মেধাগুলো যেন দেশের কাজে লাগে, দেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায় সে লক্ষ্যেই তাদের এ আন্দোলন। যতদিন সফল না হবেন তাদের আন্দোলন চলবে।
২ জুলাই বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২৫ মিনিট চলে তাদের এ অবরোধ কর্মসূচি। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পরদিন ৩ জুলাই বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। যতদিন পর্যন্ত কোটা সংস্কার ইস্যুর যৌক্তিক সমাধান না মিলবে ততদিন পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ দ্বিতীয় দিনের মতো ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপি নেতারা রংপুর সদর থেকে পদযাত্রা শুরু করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট হয়ে নীলফামারী পৌঁছাবেন। যাত্রাপথে কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাটে পথসভায় অংশ নেবেন।
দেশব্যাপী দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে জামায়াতে ইসলামী। আজ সারা দেশে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, শহীদদের কবর জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘থিঙ্ক ব্যাক টু ৩৬ জুলাই’ নামে অনলাইন ক্যাম্পেইন করবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।