‘আম্মা, আম্মা, তোমার কী হইছে, তোমারে বড় সাহেব মারছে আম্মা, তোমারে বড় সাহেব কী করছে আম্মা...’ ধর্ষিত বিপর্যস্ত আম্মার মুখে কথা নেই, তিনি লজ্জায় ক্ষোভে নির্বাক হয়ে গেছেন...আম্মার মুখে কথা না শুনে ছোট ছেলে বাদশাহ তার মৃত বাবার বস মোজাম্মেলের ড্রয়িং রুমে ছুটে যায়, চিৎকার করে বলে ‘ওই বড় সাহেব, তুই আমার আম্মারে কী করছোস?’ এক ঝটকায় দেয়ালে টাঙানো ছুরি নিয়ে বড় সাহেবের পেটে ঢুকিয়ে দেয়, তার আম্মাকে ধর্ষণের বদলা নেয় বাদশাহ। পরিণতিতে ১৪ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় বাদশাহর। এর পরের ঘটনা আরও মর্মান্তিক। এমন একটি মর্মস্পর্শী গল্প নিয়ে ১৯৯৯ সালে চলচ্চিত্র ‘আম্মাজান’ নির্মাণ করেন বরেণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা কাজী হায়াৎ। চলচ্চিত্রটি তখন বাম্পার হিট ব্যবসা করে। দর্শক আজও ভুলতে পারেননি ‘আম্মাজান’ কিংবা কণ্ঠশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে গাওয়া এ ছবির দর্শকপ্রিয় সেই গান ‘আম্মাজান আম্মাজান, চোখের মণি আম্মাজান, বুকের ধনি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান, আপনি বড়ই মেহেরবান, জন্ম দিছেন আমায়, আপনার দুগ্ধ করছি পান, আম্মাজান আম্মাজান ও আম্মাজান...।’ কাজী হায়াৎ জানান, আমার অনেক দিনের লালিত গল্প এটি। নিজের চোখে দেখা একটি সত্য ঘটনা নিয়েই এ ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম। মফস্বলের ঘটনা এটি। ছোট্ট ছেলেটি তার মায়ের হাত ধরে চার ঘণ্টা বসেছিল। তখন মা এবং ছেলের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না। প্রশ্নটি ছিল- মা ছেলেকে কী বলবে আর ছেলে মাকে কী জিজ্ঞাসা করবে। এ দৃশ্য দেখার পরই সেখান থেকে আমার গল্পের উৎপত্তি এবং চলচ্চিত্র ‘আম্মাজান’। কাজী হায়াৎ বলেন, আমি গল্পের বাদশাহ মানে নায়ক চরিত্রে মান্নাকে নেওয়ার কথা বললে ডিপজল তা নাকচ করে দিয়ে বললেন, রুবেল বা অন্য যে কাউকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করুন। কারণ মান্না ও ডিপজলের বন্ধুত্বের সম্পর্কে তখন চিড় ধরেছিল। মান্নাকে না নেওয়ার কথা বলায় আমি হতাশায় ডুবলাম। কারণ, আমি জানি এ চরিত্রটি রূপায়ণ মান্না ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব বা মানানসই নয়। ঘটনাটি শুনে একদিন মান্না আমাকে বললেন, আপনি নাকি রুবেলকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন? আমি বললাম ‘হ্যাঁ’, এ নায়কের চরিত্রটি খুবই মারাত্মক। তুমি যদি পার ডিপজলের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ঠিক করে নাও। না হলে তোমার হাত থেকে একটি ভালো ছবি চলে যাবে। তারপর সে কী করেছিল আমি জানি না, পরদিন ডিপজল আমাকে ডেকে বললেন, মান্না শিডিউল দিয়ে গেছে তাঁকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। শুটিংয়ের শুরুতে মান্নাকে বলেছিলাম, তুমি এর আগে যেসব অভিনয় করেছ তা ভুলে গিয়ে আমি যেভাবে দেখাব তাই করবে। মান্না আমার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। এ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসায় ভেসেছিলেন মান্না। তাঁর চরিত্রটির নাম ছিল- বাদশাহ। মা-ভক্ত বাদশার পাগলামি এখনো চোখে ভাসে দর্শকদের। মাসের পর মাস চলেছিল, ভিড় ছিল সিনেমা হলে, হয়েছিল ব্যবসাসফল। তৈরি করেছিল ইতিহাস। অনেক দর্শককে কাঁদতে কাঁদতে সিনেমা হল থেকে বের হতে দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে অনেকে পরপর কয়েকবার ছবিটি দেখেছিলেন। কিছু সিনেমা ইতিহাস তৈরি করার পেছনেও থাকে ইতিহাস। আম্মাজান চলচ্চিত্রটি ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায়। জানা গেছে, ছবিটি নির্মাণে আনুমানিক ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়। মুক্তির আগের দিন এ ছবির প্রযোজক প্রযোজনা ও সংগীত স্বত্ব বিক্রি করে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা আয় করেন। অর্থাৎ মুক্তির আগের দিনই চলচ্চিত্রটি ২ লাখ টাকা মুনাফা করে। এরপর ছবিটি প্রায় ১১ কোটি টাকার ব্যবসা করে বলে ফিল্মপাড়া সূত্র জানায়। ২৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগেও পুরস্কার লাভ করেন এবং ছবিটি বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও মান্না শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, সেরা কণ্ঠশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর পুরস্কারসহ পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে।
শিরোনাম
- ২ ঘণ্টা পর টিকাটুলির ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
- দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে আঘাত করলো লাগেজ ট্রলি
- শরীরে ‘ইসলামিক’ ট্যাটু করা কি জায়েজ
- খেলাধুলার মানোন্নয়নে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ভূমিকা
- পর্যটনের স্বপ্ন ফাইলেই বন্দি
- স্বস্তির জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আটের মঞ্চে রিয়াল
- উড্ডয়নের ৭ মিনিট পরই বিধ্বস্ত বিমান, নিহত ৬
- ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- ভরপেট খেলেও মোটা হবেন না, জানুন কোন খাবারগুলো নিরাপদ
- দাম কমলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের, আজ থেকেই কার্যকর নতুন প্যাকেজ
- টিএসসিতে রিকশার ভেতরেই মিলল চালকের মরদেহ
- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত
- ১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন: সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
- প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করেন যে অভিনেতা
- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নির্দেশনা
- ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু
- মুস্তাফিজকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে শ্রীলঙ্কা
- ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান
- রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহে রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পেল পাকিস্তান