বলিউড অভিনেত্রী প্রয়াত শ্রীদেবী একবার কলকাতায় এসে নিজের কথার দোষেই পড়ে গিয়েছিলেন মহাবিপদে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের প্রিয় অভিনেতার নাম বলতে গিয়ে তাকে পড়তে হয়েছিল বিব্রতকর অবস্থায়। তবে বক্তব্যের শুরুটা তিনি মন্দ করেননি, শ্রীদেবী বলেছিলেন, ‘কলকাতায় বিশ্বমানের ছবি হয়ে থাকে। একটু অন্য ধারার ছবির কথা যদি বলি ভারতবর্ষের অন্য স্টেটগুলোর মধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গলেই এ ধরনের ছবিগুলোকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করতে দেখা যায়।’ তবে অপ্রীতিকর মুহূর্তটা ঘনিয়ে এলো যখন তিনি বলতে গেলেন বাংলা ছবির স্বর্ণযুগ ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, ন্যাচারাল অ্যাকটিং কাকে বলে সেটা স্বর্ণযুগের চিত্রতারকারা দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যস সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন ‘ম্যাডাম, স্বর্ণযুগের বাংলা সিনেমার কোন অভিনেতাকে আপনার সবচাইতে বেশি ভালো লাগে?’ একটু ভেবে নিয়ে শ্রীদেবী বলেছিলেন, ‘বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জিকে আমার ভালো লাগে’। তারপরই সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘ম্যাডাম আপনার বিচারে এনাদের মধ্যে সেরা কে, উত্তম কুমার নাকি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?’ এবার শ্রীদেবী একটু ঘাবড়ে গেলেন। উপস্থিত সবার মধ্যে হয়তো কেউ কেউ বুঝতে পেরেছিলেন শ্রীদেবী এনাদের নাম এই প্রথম শুনছেন। সে সময় তিনি কোনোভাবে ঘটনাটা এড়িয়ে গেলেও শ্রীদেবীর মনটা কিন্তু খচখচই করছিল। উত্তম বা সৌমিত্রের নাম না জানাটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু ভিতর ভিতর তিনি অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। শ্রীদেবীর এও মনে হয়েছিল, উত্তম বা সৌমিত্র যদি খুব উঁচুদরের অভিনেতা হয়ে থাকেন তবে এঁদের বিষয়ে না জানাটা খুবই অন্যায় হবে। তাই বোম্বে ফিরেই উত্তম কুমার অভিনীত ‘অমানুষ’-এর হিন্দি ভার্সনটা দেখতে লাগলেন। যদিও তিনি বহু আগেই এনটিআরের ‘এদুরেথা’ দেখেছিলেন, সেটা ছিল ‘অমানুষ’-এর রিমেক এবং তেলেগু ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল। আর এত বছর পর সেটারই অরিজিনাল ভার্সন ‘অমানুষ’ দেখতে বসলেন এবং শোনা যায় এতটাই নাকি শ্রীদেবীর এই ছবিটা ভালো লেগে গিয়েছিল তিনি নাকি টানা ১০ দিন একবার করে হলেও ছবিটা দেখেছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিটি দেখেছিলেন। এ ছবিতে সেখানে আবার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনা শ্রীদেবীকে মুগ্ধ করেছিল। গল্পটাকে কত সহজ করে তুলে ধরা হয়েছে তাও আবার এত ডিটেইলিংয়ের সঙ্গে সেটি দেখে অবাক হয়েছিলেন তিনি। শ্রীদেবী কলকাতার সেই সাংবাদিককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছিলেন, ভাগ্যিস সেই প্রশ্নটি তিনি শ্রীদেবীকে করার মতো সৎ সাহস দেখিয়েছিলেন বলে। অন্যদিকে আরেকটি ঘটনা হলো, শ্রীদেবী এমন একটি তারকাবহুল বিগ বাজেটের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যে ছবি কখনো মুক্তি পায়নি এবং আর পাবেও না। তারকাখচিত আশির দশকে নির্মিত এই ছবির নাম ‘জমিন’।
রাহুল দেব বর্মণ এই মিউজিক্যাল হিট ছবিতে সুরারোপ করেছিলেন। যে গানগুলোও দেখার থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল দর্শক। অথচ মাল্টিস্টারার ছবিটি রিলিজ করলে সুপারহিট হতে পারত। আশির দশকের শুরুতেই তৈরি হয় এই ‘জমিন’ ছবিটি। তারকাখচিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রজনীকান্ত, সঞ্জয় দত্ত, শ্রীদেবী এবং শত্রুঘ্ন সিনহা। পরিচালনা করেছিলেন রমেশ আহুজা। একেবারে মেইনস্ট্রিম অ্যাকশন ড্রামার ছবি ছিল ‘জমিন’। আর্মি অফিসার রজনীকান্ত ও পুলিশ অফিসার সঞ্জয় দত্ত দুজনে সন্ত্রাসবাদীদের খুঁজছেন। এই ঘিরেই গল্প। শ্রীদেবী নায়িকার লিড চরিত্রে ছিলেন। অসম্ভব দাপুটে অভিনয় করেছিলেন শ্রীদেবী। সাদা পোশাকে নাচের দৃশ্য ছিল শ্রীদেবীর। আর একটি বিশেষ চরিত্রে ছিলেন বিনোদ খান্না। আরও চমকপ্রদ ব্যাপার হলো মাধুরী দীক্ষিতও ছিলেন এই ছবিতে।
কিন্তু মাধুরী তখন নবাগত অভিনেত্রী। ছবির শুটিং সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও এটি কখনো মুক্তি পায়নি। আর্থিক কারণ ও ডিস্ট্রিবিউশন অসুবিধার কারণে ছবিটি আলোর মুখ দেখেনি। বহু দর্শকের প্রতীক্ষা সত্ত্বেও ‘জমিন’ কখনো রিলিজ করল না। বর্তমানে ছবিটির আর কোনো খোঁজ নেই।