ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস। ভোট নিয়ে আছে নানান সমীকরণ। নির্বাচনে শীর্ষ পদে কে জিতবেন তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এরই মধ্যে প্যানেল ও প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনে ২৮ পদে ৫০৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে ৪৭ জনের মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে। আজ প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী তালিকায় স্থগিত হওয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন।
ভোটের মাঠে শীর্ষ পদগুলোতে প্রার্থীসংখ্যাও অনেক। ভিপি পদে ৪৮ জন, জিএস পদে ১৯ জন, এজিএস পদে ছাত্র ২৮ জন লড়বেন বলে জানা গেছে। এ বছর নির্বাচনে দলীয়ভাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল, ছাত্র অধিকার পরিষদ-সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন-সমর্থিত প্যানেল, বাম ছাত্রসংগঠনসমূহের গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট-সমর্থিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন খালিদের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে দুটি স্বতন্ত্র প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই আটটি প্যানেলই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল হিসেবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ‘জুবায়ের-মুসাদ্দেক স্বতন্ত্র প্যানেল’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ)-ছাত্র ফ্রন্ট (একাংশ)-জাসদ ছাত্রলীগ সমন্বিত আংশিক প্যানেল ঘোষণা করে। এসব প্যানেলের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস পদ প্রার্থী এস এম ফরহাদ, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ থেকে ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের ও জিএস পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার, ছাত্র অধিকার পরিষদ-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাম জোট-সমর্থিত প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। শীর্ষ তিন পদ ছাড়াও বিভিন্ন পদে শিক্ষার্থীরা কাকে নির্বাচিত করবেন সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমীকরণ লক্ষ করা যায়।
দল নয় ব্যক্তিকে প্রাধান্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ডাকসু নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের চেয়ে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে চান। ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয়কে মুখ্য না করে ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী কেমন, তা বেশি নির্ভর করে তাকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে।
জুলাই অভ্যুত্থানে অবদান : শিক্ষার্থীরা কাউকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেন কোন প্রার্থী জুলাই অভ্যুত্থানে কেমন ভূমিকা রেখেছেন তার ওপর। জুলাইয়ে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, পলিসি মেকিংয়ে যুক্ত থাকা, আহত হওয়া প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবেন তারা। একজন প্রার্থী জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করেন কি না, সেটা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যক্তিপরিচয় : বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে অ্যাকটিভিজম করা ব্যক্তি, শিক্ষার্থীদের মাঝে কল্যাণমূলক কাজ করা নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনায় আসা ব্যক্তিরা ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন। ক্যাম্পাসে সুপরিচিত থাকা প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে এগিয়ে থাকার একটি অন্যতম হাতিয়ার হবে।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট : ডাকসু নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর জয়ী হওয়া না হওয়ার ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় একটি অংশের শিক্ষার্থী থাকেন হলের বাইরে। তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শতাংশ ছাত্রী এবং ৩৪ শতাংশ ছাত্র ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। অনাবাসিক এই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতো তাদের কাছে প্রচারণা করা, প্রভাবিত করা সহজ কাজ নয়। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি স্বাধীনচেতা বলে বিবেচিত হন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যেমন ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র সংসদ যেসব কল্যাণমূলক কাজ করেছে তা আবাসিক শিক্ষার্থীরা ভোগ করছেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল পরিবহনব্যবস্থা উন্নত করা। সে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বড় অংশ অনাবাসিক থাকায় তাদের ভোট ব্যাপক প্রভাব ফেলবে নির্বাচনে।
নারী শিক্ষার্থীদের ভোট : বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা সংখ্যায় পুরুষ শিক্ষার্থীদের প্রায় সমান। এ বছর মোট ভোটারের প্রায় ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী ভোটার, যা নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইতোপূর্বে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রার্থীরা নারী ভোটারদের কাছে অগ্রাধিকার পেতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে নারী প্রার্থীদেরও এগিয়ে রাখবেন নারী শিক্ষার্থীরা। সে ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের ভোটও পাল্টে দিতে পারে নির্বাচনের সমীকরণ।