কুড়িগ্রামের রৌমারী-চিলমারী উপজেলা ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদে একটি সেতুর অভাবে মেলবন্ধন হচ্ছে না দেশের রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিভাগসহ উত্তর ও দক্ষিণের ২০ জেলার। সেখানে লাখো মানুষের পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকা। স্থানীয়রা বলছেন, জেলা শহরের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারী, রাজীবপুর উপজেলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট দীর্ঘদিনের। এখানে ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাশে রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের বলদমারা। অন্য পাশে চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট। নদ পারাপারে কয়েক লাখ মানুষের নৌকাই একমাত্র ভরসা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নৌকায় নদ পার হয়ে আসেন অফিস-আদালতে। অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করে অফিস করতে হয়। চিলমারী-রৌমারী সেতুর দাবিতে হয়েছে একাধিকবার আন্দোলনও। এরই ফলশ্রুতিতে তিন বছর আগে সেতু বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান। তবে এরপর থেকে ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণের নেই কোনো অগ্রগতি। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণ হলে উত্তরাঞ্চলে ঘটবে শিল্পকারখানা, কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার, শিল্পের কাঁচামাল তৈরির কারখানা এবং ইপিজেড গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের সোনাহাট, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধা, রৌমারী, হিলি স্থলবন্দরসহ চিলমারী নৌবন্দরের পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পরিবহন করা যাবে। কুড়িগ্রাম শহর থেকে ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ যেতে হয় সিরাজগঞ্জ হয়ে যমুনা সেতু দিয়ে। ব্রহ্মপুত্র সেতু হলে কুড়িগ্রাম শহর থেকে রৌমারী হয়ে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ হয়ে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার এবং ঢাকার সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। অনার্সপড়ুয়া শিক্ষার্থী হামিদুর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্র সেতু হলে আমাদের মতো অনেক গরিব শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম এসে পড়ালেখার সুযোগ পাবে। শফিক আহমেদ জানান, রৌমারী, রাজীবপুর উপজেলার সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও আদালতে বিচার প্রার্থীদের কুড়িগ্রাম এসে অফিশিয়াল কাজ করতে হলে এক দিন আগে আসতে হয়। কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবদুল আজিজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুর দাবি জানানো হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মির্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে সেতু বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন করে ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাদের মতে, এখানে সেতু নির্মাণের ক্ষেত্র সাশ্রয়ী ও যুক্তিযুক্ত। ব্রহ্মপুত্র সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ রাখতেও মতামত দেয় ওই বিশেষজ্ঞ দল।