ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে (পণ্য রাখার স্থান) গতকাল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বেলা আনুমানিক আড়াইটায় আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনী ও বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন। এতে ব্যবহার করা হয় টিটিএল এবং রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট। হ্যাঙ্গার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ।
আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছিল শহরের শেষ মাথা থেকেও। আগুন নেভাতে গিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এদের মধ্যে আনসার, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন। তাদের ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরে প্রায় সাত ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিমানবন্দর এলাকায়। চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণকে। নিকুঞ্জ সড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমানের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. নওসাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও কার্গো কমপ্লেক্সের কর্মীরা ধারণা করছেন, কেমিক্যাল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। বিমানবন্দরে স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কার্গো ব্যবস্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি কার্গো সহসাই চালু হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে আমদানি করা বিভিন্ন কেমিক্যাল, ওষুধ, টেলিকমিউনিকেশনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, ফেব্রিকসহ সব ধরনের পণ্য মজুত রাখা ছিল। কেমিক্যাল ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে গতকাল শনিবার থাকায় হাফ শিফটে বেলা দেড়টা পর্যন্ত মালামাল আনলোড হওয়ায় কোনো কর্মী ভিতরে আটকা পড়েননি বলে জানা গেছে।
আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি হওয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা বিমানগুলো টেনে আগুনের উৎস থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগুন লাগার পর বিমান ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করে বেবিচক। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিদেশগামী যাত্রীরা। আগুন নেভাতে ৫ হাজার পুলিশসহ যোগ দেয় ২৮টি সংস্থা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত উৎস সম্পর্কে কিছুই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্কাই ক্যাপিটাল লাউঞ্জ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্যাপিটাল লাউঞ্জ শাহজালাল বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের প্রবেশপথের পাশেই।
শুরুতে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেলে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ফায়ার স্টেশন আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করে। এরপর নৌবাহিনীর একটি ইউনিট যোগ দেয়। কার্গো ভিলেজে অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ধাপে ধাপে যোগ হতে থাকে অতিরিক্ত ইউনিট ও টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) গাড়ি। কিন্তু আগুনের বিস্তার ঠেকানো যায়নি। দাউ দাউ করে পুরো আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স জ্বলতে থাকে। ঘটনাস্থলে আনা হয় বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। কয়েকজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কার্গো কমপ্লেক্সের কর্মীরা দাবি করেছেন, কেমিক্যাল থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
জানা গেছে, আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের বাইরের অংশ গেট-বি। এই অংশে ফেব্রিক্সের মালামাল রাখা হয়। এর পাশেই এক্সপ্রেস ইউনিট কাস্টম হাউস অফিস, যা কুরিয়ার অফিস নামে পরিচিত। ৩৫টি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমদানি হয়ে আসা মালামাল খালাস হয় এই কাউন্টারের মাধ্যমে। এর পাশেই রয়েছে পাবলিক টয়লেট। এ ছাড়াও বাইরের অংশে রয়েছে কুরিয়ারের মালামাল নিতে আসা লোকদের ওয়েটিং রুম।
এই ওয়েটিং রুমের পেছনের অংশেই স্কাই ক্যাপিটাল লাউঞ্জ। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। স্কাই লাউঞ্জের পাশে কেমিক্যালসহ সব ধরনের মালামাল রাখা হতো। এটির সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের একটি রেস্ট রুম রয়েছে। আর বি-গেটের বিপরীত পাশে কার্গো কমপ্লেক্সের ১ নম্বর গেট। এখানে সব কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয়। এই ১ নম্বর গেটে এবং ওয়েটিং রুমের পেছনের অংশে সবচেয়ে বেশি আগুনের তীব্রতা দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিমানবন্দরের বেল অর্ডার অপারেটর ওয়ালিদ বলেন, বেলা ২টার দিকে স্কাই লাউঞ্জে আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। তখন ভিতরে থাকা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এরপর নৌবাহিনীর একটি গাড়ি যোগ দেয়। এতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো কার্গো কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়ে।
কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘শনিবার হাফ শিফটিং কার্যক্রম চলে কার্গো কমপ্লেক্সে। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আমাদের কোম্পানির আড়াই টন মাল নেমেছে আজ। সব পুড়ে গেছে নিশ্চিত। সব গার্মেন্ট আইটেম মাল ছিল। বাটন, জিপার ফেব্রিকস ও বিভিন্ন লেভেল আইটেম।’ কুরিয়ার মাস্টার ইয়ার কোম্পানির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মো. রোকন মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মালামাল কার্গো হয়ে আসে। এই ঘটনায় বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা। স্কাই লাউঞ্জে কেমিক্যাল, ফেব্রিক, মেশিনারিজসহ সব ধরনের মালামাল রাখা হয়। আমাদের ধারণা কেমিক্যাল থেকেই আগুন লেগেছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে।’
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, কার্গো সেকশনের পাশে একটি অংশে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বিমানবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িক স্থগিত করা হয়।
আগুন নির্বাপণ অভিযান শুরুর পর খাওয়ার পানির সংকটে পড়েন অভিযানে অংশ নেওয়া সদস্যরা। একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা মাইকিং করে জনসাধারণের কাছে খাওয়ার পানির জন্য সহযোগিতা চান। তখন প্রত্যক্ষদর্শী ও বিমানবন্দরের কর্মীরা খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করে দেন।
বিকাল সোয়া ৫টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সিভিল এ্যাভিয়েশনসহ বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট কাজ করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তৃতীয় টার্মিনাল থেকেই ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী দেখা যায়। মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা হতবাক হয়ে বিমানবন্দরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেনাবাহিনী প্রধান সড়কে আলাদা একটি লেন তৈরি করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার সুযোগ করে দেয়। বিমানবন্দরের সব গেট ও এপিবিএন সদর দপ্তরের বিপরীত পাশের গেট জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে ৮ নম্বর গেটও সেনাবাহিনী বন্ধ করে দেয়। ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।
ঢাকা কাস্টম হাউস সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খাইরুল আলম ভূইয়া মিঠু বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়লাম। আমদানি করা সব মূল্যবান মালামাল পুড়ে গেছে। কার্গো ব্যবস্থাপনা এখন অচল প্রায়। হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এটি কীভাবে পূরণ হবে তা বলা সম্ভব নয়।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে আটজন রোগীকে আনা হয়েছে। তবে তাদের কেউ আগুনে দগ্ধ হননি। অতিরিক্ত গরমে কিংবা দৌড়াদৌড়িতে হালকা আহত হয়েছেন। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, সুস্থ আছেন। একজন গরমের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। আগুনের ধোঁয়ায় শেখ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা : দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সব নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান তারেক রহমানের : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য আমার দোয়া রইল এবং আমি আশা করি সবাই নিরাপদে আছেন।
জনসেবার প্রতি সত্যিকারের নিষ্ঠা প্রদর্শন করে দ্রুত এবং সাহসের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যদের প্রশংসা করেন তিনি।
তারেক রহমান মিরপুর এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ঘটনার কারণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য জননিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা অপরিহার্য।’
উল্লেখ্য, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে গতকাল দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আগুন নিয়ে যা বললেন ফখরুল : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন ও কয়েকজন আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে এবং দেশ অস্থিতিশীল করতেই ফ্যাসিস্টদের দোসররা জোরালোভাবে নানা ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এ ধরনের অপকর্ম ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য দেশের আপামর মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দেশ অস্থিতিশীল করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা এখনো সদাতৎপর। সম্প্রতি দেশে কয়েকটি আগুনের ঘটনা এবং আজ (শনিবার) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।’ এসব আগুনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে জনগণ বিশ্বাস করে, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আর অসংখ্য ছাত্র-জনতার নিদারুণ যন্ত্রণাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তবে গণ অভ্যুত্থানের সাফল্য এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে স্বৈরাচারের অংশীদাররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।’ ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি সতর্ক থাকলে বাংলাদেশকে আর নৈরাজ্যের গভীর অন্ধকারে নিক্ষেপ করা যাবে না। ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৬ বছরের অনাচার-অবিচার থেকে জনগণকে বিস্মৃত করা যাবে না,’ যোগ করেন তিনি। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আগুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণপূর্বক সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন এ তথ্য জানান।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী। সদস্যসচিব হলেন অর্থ মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
এ ছাড়া সদস্যরা হলেন-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মু. রইচ উদ্দিন খান, জাতীয় রাজস্ব বোড প্রথম সচিব মো. তারেক হাসান, কাস্টম হাউস ঢাকার যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণপূর্বক সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে।