বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাই ছবির মুক্তি হয়ে পড়েছে ঈদ বা উৎসবকেন্দ্রিক। এতে বছরের বাকি সময় মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবির অভাবে লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছেই। অন্যদিকে ঈদের সময় স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে বেশিসংখ্যক ছবি মুক্তি দিতে গিয়ে সিনেমা হল মালিক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক উভয়েই ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েন। তারপরও প্রযোজকদের বিষয়টি বোধে আসে না কেন এটিই এখন প্রদর্শকদের মূল প্রশ্ন। কারণ ঈদ বা উৎসবে একটি ছবির ভাগ্যে খুব বেশি সিনেমা হল জোটে না। এ অভিযোগ খোদ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির। সমিতির কর্তাদের মতে, ঈদে ডজন ডজন সিনেমার প্রযোজক তাদের ছবি মুক্তির জন্য সিনেমা হলগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এসব ছবির মধ্যে ঈদে চালানোর মতো মানসম্মত ছবির সংখ্যা কম থাকে। তবু নানা তদবিরের কারণে সিনেমা হল মালিকরা পড়েন বিপাকে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, আসলে ঈদে ছবি মুক্তি থাকে উন্মুক্ত, তাই চাইলেই যে কেউ ছবি মুক্তি দিতে পারেন। এ কারণে এ সময় ছবি মুক্তির আবেদনও বেশি থাকে। যেমন স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে দুটি ছবির বেশি মুক্তির নিয়ম নেই। ঈদে এই নিয়ম থাকে না। তবে মানসম্মত ছবি হলে ঈদে বেশি ছবি চালিয়েও লাভবান হওয়া যায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১৯৯২ সালে রমজানের ঈদে সর্বোচ্চসংখ্যক ১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ওই সময় একদিকে সিনেমা হল ছিল সহস্রাধিক অন্যদিকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি ছবিই ছিল মানসম্মত। তাই সব ছবিই ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল এবং প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই লাভবান হয়েছিলেন। এই চিত্র এখন তো নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা এখন অর্ধশতের কোঠায় আর দর্শক গ্রহণযোগ্য ছবিও তেমন নেই। তাই শুধু ঈদ বা উৎসবে ছবি মুক্তি দেওয়ার জন্য নির্মাতাদের দৌড়ঝাঁপ এখন মূল্যহীন। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আরেক কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ঈদ হচ্ছে চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম। তাই সব নির্মাতাই ঈদে ছবি মুক্তি দিতে চান। আমার কথা হলো, ভালো ছবি হলে সব সময়ই তা চলবে এবং প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সাধারণ সময়ে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবির অভাবে সিনেমা হল মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। আমার মতে, দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা খুবই কম তাই নির্মাতাদের শুধু ঈদ বা অন্য উৎসবে বেশি পরিমাণে ছবি মুক্তি দেওয়ার আগ্রহ নির্মাতা ও প্রদর্শক উভয়ের জন্য অলাভজনক। আমি নির্মাতাদের বলব, আপনারা সারা বছর মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি সিনেমা হলে মুক্তি দিন। এতে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ঘটবে। স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদের সময় এত বেশি ছবির আবেদন ও তদবির থাকে যে তাতে আমরা রীতিমতো হিমশিম খাই। কারণ একদিকে আমাদের স্ক্রিনের সংখ্যার সীমাবদ্ধতা অন্যদিকে সিনেপ্লেক্সের দর্শক আলাদা। এখানে শুধু মানের বিচারেই ছবি প্রদর্শন করা হয়। সাধারণ ছবি চালাতে গেলে এখানকার দর্শক সেগুলো দেখে না এবং সাধারণ দর্শক আবার বেশি টাকা দিয়ে এখানে টিকিট কিনে ছবি দেখতে পারে না। তাই স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের অনুরোধ ঈদ বা সাধারণ সময়ে আপনারা মানসম্মত ছবি দিন আমরা অবশ্যই তা প্রদর্শন করব। এদিকে গত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ৭ জুন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছয়টি সিনেমা। এগুলো হচ্ছে-‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ইনসাফ’, ‘টগর’, ‘এশা : মার্ডার কর্মফল’, ‘নীলচক্র’। এরপর এক মাসের মধ্য নতুন কোনো সিনেমা আর মুক্তি পায়নি। অবশেষে ১১ জুলাই মুক্তি পায় ‘অন্যদিন’ নামে একটি সিনেমা। এটি নির্মাণ করেছেন কামার আহমাদ সাইমন। মুক্তির পর দেখা গেছে, এ সিনেমায় ছিল না দর্শক আগ্রহ। এরপর ১৮ জুলাই মুক্তি পায় ‘আলী’ নামের একটি সিনেমা। এটি পরিচালনা করেছেন বিপ্লব হায়দার। ১ আগস্ট মুক্তি পায় ‘উড়াল’। এটি নির্মাণ করেছেন জোবায়দুর রহমান। ৮ আগস্ট মুক্তি পায় সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘জলরঙ’ সিনেমা। নির্মাণ করেছেন কবিরুল ইসলাম রানা। ঈদ-পরবর্তী এই চারটি সিনেমা মুক্তি পেলেও একটিতেও ছিল না দর্শক আগ্রহ। এমনকি প্রেক্ষাগৃহ মালিকরাও ইচ্ছার বিরুদ্ধেই মানে সিনেমা না থাকায় এসব সিনেমা চালিয়েছেন। তাতে করে তাদের বিদ্যুৎ বিল এবং মেনটেইন্যান্স খরচও ওঠেনি বলে জানিয়েছেন তারা। এরই মধ্যে আবারও উৎসবে সিনেমা মুক্তি ও নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছেন প্রযোজকরা। আসন্ন দুর্গাপূজায়ও একাধিক সিনেমা মুক্তির প্রস্তুতি চলছে। জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদে যেসব সিনেমা মুক্তির ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে গেছে, সেগুলো মুক্তি পাবে শারদীয় উৎসবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নাদান’, শবনম বুবলী অভিনীত ‘সর্দার বাড়ির খেলা’ ও ‘পিনিক’, নিরব হোসেনের ‘শিরোনাম’। এদিকে আগামী ঈদুল ফিতরের জন্যও সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্মাতারা। শুরু হয়ে গেছে তাদের ঈদকেন্দ্রিক ছবি নির্মাণের ব্যস্ততা। এরই মধ্যে কয়েকটি সিনেমার ঘোষণাও দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এসব সিনেমার শিল্পীদের তালিকায় আছেন শাকিব খান, আরিফিন শুভ, সিয়াম, আফরান নিশো ও শরিফুল রাজের মতো নায়করা। এরই মধ্যে ‘দম’ নামে একটি সিনেমার ঘোষণা দিয়েছেন নির্মাতা রেদোয়ান রনি। তিনি জানান, এতে নায়ক হিসেবে থাকবেন আফরান নিশো। নির্মাতা তানিম নূর বলেন, ‘রোজার ঈদকে টার্গেট করেই একটি সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ‘বরবাদ’ সিনেমার নির্মাতা মেহেদি হাসান হৃদয়। তিনিও ঈদকে টার্গেট করে তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটিও প্রযোজনা করবেন ‘বরবাদ’ প্রযোজক শাহরিন সুমি। শাহরিন আক্তারও ঈদে ছবি নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাট্যনির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদও আগামী ঈদের জন্য সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে বলা যায় সব নির্মাতার মানসিকতাই এখন ঈদ বা উৎসবকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এটিকে মন্দ বলা যাবে না। কিন্তু বাস্তব কথা হলো, বছরের বাকি সময়গুলো মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি না থাকলে সিনেমা হলগুলো টিকে থাকবে কীভাবে?
শিরোনাম
- সারোয়ার তুষারের শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করল এনসিপি
- যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদনের রেকর্ড
- উগান্ডার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের চুক্তি: অর্থনৈতিক চাপ, শুল্ক ছাড় ও বিতর্কের নেপথ্য কাহিনি
- একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু
- দাপট পিটিয়ে মারা চক্রের
- বুড়িগঙ্গায় নারী-শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার
- বিভ্রান্ত যাত্রী ককপিটে, তারপর যা ঘটল...
- মায়ের মৃত্যু সংবাদে স্ট্রোক করে প্রাণ হারাল ছেলে
- হত্যা মামলায় কারাগারে জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি
- হোয়াটসঅ্যাপে ‘বিয়ের দাওয়াত’ ফাঁদে দুই লাখ রুপি হারালেন সরকারি কর্মকর্তা
- সরকারি খরচে ১২ লাখ ৬১ হাজারকে আইনি সহায়তা
- যুক্তরাষ্ট্রে ডাক পরিষেবা সাময়িক বন্ধ করছে ভারত
- দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে সম্মত জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া
- রিমান্ড শেষে কারাগারে আনিসুল-মেনন
- ঢাকায় জনদুর্ভোগ এড়াতে সমাবেশের জন্য ৯১ স্থান প্রস্তাব ডিএমপির
- নারী বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ
- সোমবারের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নতুন লঘুচাপের আশঙ্কা
- আবদুস সালামকে দেখতে হাসপাতালে ডা. রফিক
- নাফনদী থেকে ট্রলারসহ ১২ জেলে অপহৃত, অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে
- তিন দিনের মাথায় আবারও বন্ধ কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট
বিপাকে সিনেমা হল মালিকরা
ঢাকাই ছবি এখন উৎসবকেন্দ্রিক
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর