দেরিতে হলেও ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে দুই বাংলার চলচ্চিত্র প্রদর্শনে আশার আলো দেখা দিচ্ছে। খুলে যাচ্ছে দুই বাংলার চলচ্চিত্র দুয়ার। শীঘ্রই দুই বাংলায় পরস্পরের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হচ্ছে। ঢাকা ও কলকাতার চলচ্চিত্র আদান-প্রদানের অংশ হিসেবে গত বছর কলকাতায় রপ্তানি করা হয়েছে ঢাকার ৮টি ও ঢাকায় এসেছে কলকাতার দুটি ছবি। এগুলোর মধ্যে কলকাতা সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছে ঢাকার দুটি এবং স্থানীয় সেন্সর বোর্ডে জমা আছে
কলকাতার দুটি ছবি।
প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, কলকাতার সেন্সর বোর্ডে গত বছর জমা পড়া ছবি দুটি কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে গিয়ে সেন্সর করতে সময় লাগছে। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছবির সঙ্গে স্থানীয় চিত্রনাট্যকারকে দিয়ে চিত্রনাট্য লিখিয়ে তা জমা দেওয়া। ইতোমধ্যে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ হয়েছে। এখন কলকাতা সেন্সর বোর্ড ভারতীয় সেন্ট্রাল সেন্সর বোর্ডের কাছে চলচ্চিত্র দুটির সেন্সর সেন্ট্রাল বোর্ডে হবে নাকি কলকাতায় হবে তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কারণ বিদেশি ছবি সেখানে সেন্সরের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল সেন্সর বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সুদীপ্ত দাশ বলেন, সেন্ট্রাল বোর্ড থেকে নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই সেন্সর সম্পন্ন এবং মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেখানকার প্রদর্শক শংকর দত্ত। যে দুটি ছবি কলকাতা সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছে সেগুলো হচ্ছে জাকির হোসেন রাজুর 'মা আমার স্বর্গ' এবং আজাদী হাসানত ফিরোজের 'তুমি আমার মনের মানুষ'। তা ছাড়া সেখানে পাঠানো বাকি ৬টি ছবি হচ্ছে এফ আই মানিকের 'হৃদয়ের বন্ধন', আমজাদ হোসেনের 'প্রাণের মানুষ', শহীদুল ইসলাম খোকনের 'মুখোশধারী', কাজী হায়াতের 'শ্রমিক নেতা', শেখ নজরুল ইসলামের 'জ্যোৎস্নার প্রেম' এবং সোহানুর রহমান সোহানের 'অনন্ত ভালোবাসা'। কলকাতার প্রদর্শক-পরিবেশক সংস্থা লক্ষ্মী ফিল্মসের কর্ণধার শংকর দত্ত তার কে কে এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে ঢাকার চলচ্চিত্র কলকাতায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করছেন। ছবিগুলো রপ্তানি করেছে খান ব্রাদার্স ও উপহার সিনেমা।
পুরনো ছবি প্রেরণ প্রসঙ্গে সুদীপ্ত দাশ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি করা হয়েছে বলেই পুরনো ছবি পাঠানো হলো। আমরা দেখতে চাচ্ছি ঢাকার ছবি সেখানে প্রদর্শনে অলিখিত বাধা দূর করা যায় কি-না এবং এখানকার ছবি কলকাতার দর্শক কতটা গ্রহণ করে।
এদিকে ঢাকা সেন্সর বোর্ডে জমা পড়া কলকাতার ছবি দুটো হচ্ছে 'খোকাবাবু' এবং 'খোকা ৪২০'। সুদীপ্ত দাশ বলেন, সেন্সর বোর্ডের নিজস্ব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হচ্ছে বলে সেন্সর করতে সময় লাগছে। আশা করছি শীঘ্রই সেন্সর সম্পন্ন এবং ছবিগুলো প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। সেন্সর বোর্ড সূত্র জানায় সবেমাত্র নতুন ভাইস চেয়ারম্যান মি. জাকির সংস্থাটিতে যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে শীঘ্রই দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।
চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলছেন দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক মেল বন্ধনে কারও আপত্তি থাকা উচিত নয়। কারণ ভাষা আর সংস্কৃতির দিক দিয়ে দুই বাংলা প্রায় অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অন্যতম সহায়তা প্রদানকারী দেশ হচ্ছে ভারত। ভারত থেকে টিভি চ্যানেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করা গেলে ছবি কেন প্রদর্শন করা যাবে না। দুই বাংলার মধ্যে ছবি আদান প্রদান হলে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং তাতে উভয় বাংলাই চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে লাভবান হবে। তা ছাড়া এ দেশে বন্ধ প্রেক্ষাগৃহগুলো চালু হবে এবং ঢাকার ছবি কলকতায় প্রদর্শন হলে বাংলাদেশের ছবির বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।